স্বপ্নে খাওয়াঃ অনেকের কাছেই এটি মারাত্মক চিন্তার বিষয় । আদতেও এমন স্বপ্ন দেখা চিন্তারই বিষয়, কিন্তু সবক্ষেত্রে কিন্তু নয় । কেহ কেহ খাওয়ার স্বপ্ন দেখা মানেই যাদুর বস্তু খাওয়া মনে করে ভয় পেতে থাকেন, অথচ খেতে দেখলেই তা সবক্ষেত্রে যাদুর বস্তু খাওয়ার লক্ষণ নয় । চলুন বিস্তারিত আলোচনা করি ।
আপনি যদি—
- আপনি মাসে ১/২বার খাওয়ার স্বপ্ন দেখেন
- কোন কিছু খাওয়ার পরে বা খাওয়ার কল্পনা করার পরে উক্ত জিনিস খাওয়ার স্বপ্ন দেখেন
- খাওয়ার স্বপ্ন দেখার সত্ত্বেও নিম্নোল্লেখিত কোন লক্ষনই আপনার মধ্যে পাওয়া যায়না । তাহলে আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই ইনশাআল্লাহ্ । ঘুমের মাসনূন আমল করে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ুন ।
কিন্তু যদি—
- প্রায়ই স্বপ্নে খাবার খেতে দেখেন
- স্বপ্নে কেহ আপনাকে জোরপূর্বক খাওয়ায় এমনটা দেখেন
- অথবা আপনি নিজ ইচ্ছায়ই অখাদ্য কিছু যেমন- কয়লা, মাটি বা পঁচা মাংশ, মৃত পশু বা মানুষের মাংশ ইত্যাদি খাচ্ছেন এমনটা স্বপ্ন দেখেন
- খাওয়ার স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গার পরে স্বপ্নের অনুভূতি বাস্তবের মত মনে হয়
- ঘুম ভাঙ্গার পরেও স্বপ্নে খাওয়া খাবারের স্বাদ যেন মুখে লেগে আছে এমনটা অনুভব হয়
- সকাল বেলা পেট ভরা, ফাঁপা ও ফোলা অনুভূত হয়
- বমি বমি ভাব হয়
- খাবার রুচি নষ্ট হয়ে যায়
- দিনদিন শরীর শুকিয়ে যায়
- উপরোল্লেখিত লক্ষণগুলোর পাশাপাশি যাদুর অন্যান্য লক্ষণও যদি আপনার মধ্যে পাওয়া যায় । তাহলে অবশ্যই আপনার চিন্তিত ও সতর্ক হওয়া উচিত । এবং এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য রুকইয়াহ চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত ।
প্রাথমিক করণীয়ঃ
ঘুমের পূর্বে করণীয়ঃ
- অবশ্যই অযূর সহিত ঘুমানো
- ঘুমানোর পূর্বে নিজ হাতে বিছানা ঝেড়ে নেয়া
- তাহাজ্জুদে জাগ্রত হওয়ার নিয়তে ঘুমানো
- বিসমিল্লাহ বলে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়া
- মাসনূন আমল ও মাসনূন দোয়া পড়ে ঘুমানো
- খাওয়ার স্বপ্ন দেখলে ঘুম থেকে সজাগ হওয়া মাত্রই যাদু নষ্টের পানি পান করা । (যাদু নষ্টের পানি তৈরি)
আমল পদ্ধতিঃ
নিম্নোক্ত দুয়া ও আয়াতসমূহ পাঠ করে প্রথমে নিজের গায়ে ফুঁ দিবেন, অতঃপর পানিতে ফুঁ দিয়ে সেখান থেকে কিছু পানি পান করুন । অবশিষ্ট পানি থেকে কিছুটা নিজের গায়ে ছিটিয়ে বাকিটা বিছানায় ও খাটের আশাপাশে ছিটিয়ে দিন । আয়াত ও দোয়াগুলো পড়তে গিয়ে মুখের মধ্যে যে লালা তৈরি হবে তা গিলে ফেলুন । পানি পান ও ছিটানোর পাশাপাশি অলিভ অয়েল বা কালোজিরার তেলে ফুঁ দিয়ে তা লিপজেল এর মত করে উভয় ঠোঁট এ মালিশ করে দিন । এবং কালোজিরার দানায় ফুঁ দিয়ে সেখান থেকে কয়েকটি দানা মুখের মধ্যে রেখে ঘুমিয়ে পড়ুন । আশাকরি এই আমলগুলোর মাধ্যমে স্বপ্নে যাদুর বস্তু খাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ্ ।
- নিম্নোল্লেখিত দোয়া দু’টি – ৭ বার
- আয়াতুল কুরসী – ১ বার
- সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত – ১ বার
- সূরা ইয়াসিন ৯নং আয়াত – ১ বার
- তাসবীহে ফাতিমী (৩৩বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার)
বিঃদ্রঃ পান করা কিংবা ছিটানোর জন্য ন্যাচারাল গোলপের পানি, জমজম কিংবা বৃষ্টির পানি অথবা এগুলো মিশ্রিত পানি হলে বেশি ভালো ।
দোয়াঃ
بِاسْمِ اللَّهِ وَضَعْتُ جَنْبِي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَاخْسَأْ شَيْطَانِي، وَفُكَّ رِهَانِي، وَاجْعَلْنِي فِي النَّدِيِّ الْأَعْلَى
বাংলা উচ্চারণ— বিসমিল্লাহি ওয়াদা’তু জামবী, আল্লাহুম্মাগফিরলী যামবী, ওয়াখসা’ শাইত্বনী, ওয়া ফুক্কা রিহানী, ওয়াজ-আলনী ফিন-নাদিয়্যিল আ’লা ।
অর্থ— আল্লাহর নামে আমার পার্শ্বকে (শরীরকে) রাখলাম (বিছানায়), হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহকে ক্ষমা করে দিন, এবং আমার (থেকে) শয়তানকে লাঞ্চিত করে (তাড়িয়ে) দিন, এবং আমাকে (ঋণ থেকে) দায়মুক্ত করুন, এবং আমাকে উচ্চতায় (আসমানে) বসবাসকারীদের (ফেরেশতাদের) কাতারে অন্তর্ভূক্ত করে দিন । (আবু দাউদ-৫০৫৪)
بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ
বাংলা উচ্চারণ— বিসমিকা রব্বী, ওয়াদা’তু জামবী, ইন আমসাকতা নাফসী; ফারহামহা, ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাযহা বিমা তাহফাযু বিহী ইবাদাকাস সালিহীন ।
[বাংলা কিংবা অন্য কোন ভাষায় কখনোই আরবীর সঠিক উচ্চারণ প্রকাশ করা সম্ভব নয় । অবশ্যই কারো কাছ থেকে শুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নিবেন ।]
অর্থ— হে আমার প্রতিপালক! আপনার নামে আমার পার্শ্বকে (শরীরকে) রাখলাম (বিছানায়) আর আপনার নামেই তা (শরীরে) উঠাবো (বিছানা থেকে), যদি আপনি আমার প্রাণকে (দেহের বাহিরে) আটকে রাখেন (মৃত্যু দেন) তাহলে তার প্রতি আপনি দয়া করুন, আর যদি (পুনরায়) আপনি তাকে (দেহের প্রতি) ফিরিয়ে দেন তাহলে তাকে আপনি হেফাযত করুন; যেভাবে আপনার নেককার বান্দাদেরকে আপনি হেফাযত করে থাকেন । (বুখারী-৬৩২০)
বিঃদ্রঃ আমল করে ঘুমানোর কারণে যারা রাতে খাওয়ার স্বপ্ন না দেখলেও ফজরের পরে বা দিনের অন্য সময়ের ঘুমের মধ্যে খেতে স্বপ্ন দেখেন । তারা উক্ত সময়ের ঘুমের পূর্বেও আমল করে ঘুমাবেন ।
উল্লেখ্যঃ এটি একটি সাময়িক ও তাৎক্ষনিক সমাধান । স্থায়ী সমাধানের জন্য অবশ্যই রুকইয়াহ চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে জ্বীনকে পিছু ছাড়াতে হবে । আর যারা অলরেডি রুকইয়াহ করছেন, তারা রুকইয়াহ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এই আমলটি করবেন ।