কিছু কিছু রোগী আছেন যারা বছরের পর বছর কবিরাজদের পিছনে ঘুরে ঘুরে, দশ ঘাটের পানি খেয়ে জ্বিনকে আরো অহংকারী, শক্তিশালী ও আক্রমানত্বক বানিয়ে সবশেষে যখন রুকইয়াহ করাতে আসেন, তখন এক সেশনেই সুস্থ হতে চান, চিকিৎসায় সময় না দিয়ে ধৈর্য হারা হয়ে যান ।
বিনয়ের সাথে তাদেরকে বলবো—
“রাক্বিদের কাছে কোন আলাদিনের চেরাগ নেই; যা রোগীর শরীরে ধরামাত্রই শরীর থেকে এক লাফে জ্বিন বের হয়ে যাবে । আপনার চিকিৎসার জন্য এক সেশনও যেমন যথেষ্ট হতে পারে, আবার একাধিক সেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে। দীর্ঘদিন যাবত জ্বীন-যাদুতে আক্রান্ত রোগী এক সেশনেই সুস্থ হয়েছেন এমন নজীরও যেমন আছে, আবার অল্পদিনের আক্রান্ত রোগী ২/৩ সেশনেও সুস্থ হয়নি— এমন নজীরও আছে । বিষয়টা সম্পূর্ণই নির্ভর করে—রোগীর পরিস্থিতির উপর— রোগী কতটা জটিলভাবে আক্রান্ত তার উপর । ”
তবে আপনি যত বেশি আমল করবেন, যতটা গুরুত্বের সাথে আপনার রাক্বীর পরামর্শ ফলো করবেন, দ্বীনি পরিবেশ বজায় রাখবেন, তত দ্রুত আপনার সুস্থতার আশা করা যায়—ইনশাআল্লাহ্।
তিলাওয়াত নেই, সালাতের খবর নেই, পর্দার খবর নেই, গান-বাদ্য বন্ধ করতে পারেননি, বাসার দেয়ালে দেয়ালে ছবি টাঙানো, সবকিছুই আগের মত রেখে শুধুই কাজকর্মের মাঝে মাঝে রুকইয়াহ অডিও শুনবেন আর জ্বীন দৌড়ে পালাবে— এমনটা আশা করে থাকলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন ।
তবে আপনি ‘বোকা’ হলেও আপনার সাথে থাকা জ্বীনটি কিন্তু অতটাও ‘বোকা’ নয় । আপনার ঘরে এবং আপনার শরীরে বসবাসের সুযোগ থাকা অবদি সে কোনভাবেই বের হবেনা । আপনার ঘর এবং শরীর জ্বীনের বসবাসের অনুপযোগী করতে পারলে—তখনই কেবল তাকে বের হতে বাধ্য করা সম্ভব ।
ঘর থেকে কীভাবে শয়তান দূর করবেন জানতে এই পোস্টটি পড়ুন — https://muftialamin.com/protect-your-house/
আপনার কাছে যতটা সহজ মনে হচ্ছে বিষয়টি ‘ধর-মার-কাট’ এর মত এতটাও সহজ নয় ।
বিভিন্ন প্যারানরমাল সমস্যা নিয়ে একজন রোগী আসার পরে; রাক্বীর জন্য প্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— সমস্যার ধরণ নির্ণয় করা । রোগীর আচরণ, তার স্বপ্ন, পিছনের ইতিহাস, লাইফ স্টাইল ইত্যাদি বিষয়গুলো এ্যানালাইসিস করে; অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাথমিকভাবে তার সমস্যার ধরণ অনুমান করতে হয় । সে অনুযায়ী আয়াত নির্বাচন করে ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ’র মাধ্যমে সঠিক ও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হয় ।
জ্বীন, যাদু এবং বদনজরের কিছু যৌথ কমন লক্ষণ থাকায় এবং অনেক সময় একই রোগী একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত থাকে বিধায়— ডায়াগনোসিস করে সঠিক রোগ বের করে নিয়ে আসাই চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয় । যথেষ্ট পরিমাণে অভিজ্ঞতা, বিচক্ষণো ও জ্ঞানের প্রয়োজন ।দীর্ঘদিনের জটিল ও সুপ্ত কোন সমস্যা থাকলে অনেক সময় ডায়াগনোসিস রুকইয়াহতে একাধিক সেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে ।
ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ করে রোগীর সমস্যার কোন এক বা একাধিক মূল ক্যাটাগরি নির্ণয় করার পরে এরপরে তার সাব-ক্যাটাগরি নির্ণয় করতে হয় । যথা—
বদনজর হলে মানুষের বদনজর নাকি জ্বীনদের বদনজর?
যাদু হলে কিভাবে করা হয়েছে? খাওয়ানোর যাদু, স্বপ্নে খাওয়ানো যাদু, উচূতে ঝুলিয়ে রাখার যাদু, কবরে পুতে রাখা যাদু, নাকি ছিটিয়ে দেয়া যাদু?
যাদুর খাদেম জ্বীন যাদুটাকে কিভাবে রিনিউ করছে? খাদেম কি ভিক্টিমের শরীরেই বসবাস করে নাকি দূর থেকে যাদুর কার্য পরিচালনা করে?
জ্বীন হলে রোগীর শরীরের কোথায় বসবাস করছে? রোগীর সাথে কেন এসেছে? কোন কোন পয়েন্টে গিঁট বেঁধে সে শক্তিশালী হওয়ার অপচেষ্টা করছে— ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু ।
এ্যানালাইসিস ও ডায়াগনোসিস করে রোগীর সমস্যা যতটা ন্যারো করে নিয়ে আসা যাবে এবং জ্বীন-যাদুর নির্ভুল টার্গেট পয়েন্টে হিট করা যাবে, তত দ্রুত ও সহজে তার শক্তি নষ্ট হবে— ইনশাআল্লাহ্ ।
অতএব, প্রিয় ভাই! আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন, ধৈর্য ধারণ করুন, আপনার রাক্বির জন্য দোয়া করুন এবং তার পরামর্শ মেনে তার কাজে সহযোগীতা করুন । শরীয়তের পূর্ণ পাবন্দির মাধ্যমে আপনার ঘর এবং শরীরকে জ্বীনদের বসবাসের অনুপযোগী বানিয়ে ফেলুন । জ্বীন পালাতে বাধ্য হবেই হবে— ইনশাআল্লাহ । যত শক্ত যাদুই হোকনা কেন নষ্ট হবেই হবে— ইনশাআল্লাহ ।
মনে রাখবেন, আমাদের তথা শরয়ী রাক্বীদের কাছে ‘মনষা জ্বিন, রক্তে-মাংশে মিশে যাওয়া জ্বীন’ ইত্যাদি বলতে কোন টার্ম নেই । এগুলো অজ্ঞ কবিরাজদের ভেল্কি । আগুনে তৈরি জ্বিন কখনোই মাটির তৈরি মানুষের সাথে রক্তে-মাংশে মিশে যেতে পারেনা । যত শক্তিশালী জ্বীনই হোকনা কেন, এমনকি জ্বীনদের গোত্রপতিই হোকনা কেন, আল্লাহর কুরআনের সামনে সবই ‘উড়ন্ত ধূলিকনার’ ন্যায় তুচ্ছ । তবে হ্যাঁ, আমাদের ঈমানি দূর্বলতার কারণে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে জ্বীনকে চূড়ান্তভাবে পরাস্ত করে বডি থেকে বের করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে ।
আপনাকে বুঝতে হবে— রুকইয়াহ মানে হচ্ছে যাদুকর ও জ্বীনদের সাথে রাক্বী ও রোগীর যুদ্ধ । রাক্বী হচ্ছেন সেনাপতি আর রোগী তার সৈনিক । আর সেনাপতি যত দক্ষই হোকনা কেন, সকল যুদ্ধেই তো আর প্রথম দিনেই বিজয়ী হওয়া যায়না! অনেক সময় শত্রু দলের বিচক্ষণ, ধূর্ত ও শক্তিশালী সেনাদেরকে ২/৪ বার আঘাত করে করে দূর্বল করে তবেই আখেরী আঘাতে শেষ করার প্রস্তুতি নিতে হয় । এর মানে এই নয় যে, প্রথম দিকের ছোট ছোট আঘাতগুলো বিজয়ের ক্ষেত্রে কোন কাজে আসেনি, বরং প্রথম দিকের আঘাতগুলোই চূড়ান্ত বিজয় আনতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে । ঠিক তেমনিভাবে প্রথম ১/২ সেশনে আপনার তেমন দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, জ্বীন হাজির হয়নি, চিল্লা-পাল্লা করেনি— এর মানে কখনোই এটা নয় যে, উক্ত সেশনগুলো আপনার কোন কাজে আসেনি, বরং সেগুলোই আপনার চূড়ান্ত সুস্থতার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখবে— ইনশাআল্লাহ্ । আল্লাহ পাক আমাদের সঠিক বুঝ দান করেন । আমীন ।
আরো পড়ুন— https://muftialamin.com/huash-shafi/