হিন্দুদের পূজা চলাকালীন জ্বীন-যাদুর রোগীদের করণীয় কী?
হিন্দুদের পূজা চলাকালীন জ্বীনদের শক্তি বেড়ে যায় মর্মে বিভিন্নজন যেভাবে অতি ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছেন— বিষয়টি আদতে অতটাও ভয়ের নয় ।সতর্কতা কাম্য ঠিক, কিন্তু অতি ভীতি মোটেই কাম্য নয় । এতে শয়তানের অহমিকা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাবে ।
কথিত আছে— হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পূজা । তাই পূজার কারণে জ্বীনের শক্তি বৃদ্ধি পেলে, সে সম্ভাবনা সারা বছরই থাকে । শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দুদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান, এই পূজায় টানা কয়েকদিন ব্যাপী পূজা অর্চনা হয়— সে দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যান্য পূজার চেয়ে এখানে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন, এতটুকুই যথেষ্ট । এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। এটা নিয়ে অতিরিক্ত হা হুতাশ করা, মনোবল হারিয়ে ফেলা একদমই উচিত নয়। পূজার সময় কিছু কিছু রোগীদের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ঠিক, তবে ঢালাওভাবে সকল প্রকার জ্বীন আক্রান্ত রোগীদের সমস্যা বাড়ে না।
যে সমস্ত রোগীদের হিন্দু জ্বীন আছর করেছে, অথবা আল্লাহর নাম ব্যতীত পশু জবাই করে সেই রক্ত, চামড়া ইত্যাদির মাধ্যমে যাদেরকে যাদু করা হয়েছে । যে যাদুর সাথে সরাসরি শয়তানের সম্পৃক্ততা রয়েছে—এ ধরনের রোগীদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে । আবার শক্তভাবে আমলের উপরে থাকলে নাও বাড়তে পারে।
তবে আপনি যদি অতি ভীতির কারণে মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন, আপনার জ্বীন এই সময়টাতে আপনাকে অনেক ক্ষতি করবে বা সে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেন—তাহলে সে অহমিকায় পড়ে সত্যিকারেই ডিস্টার্ব এর মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ খুঁজবে । শক্তি না বাড়লেও সে শক্তি বৃদ্ধির ভাব ধরবে । এক্ষেত্রে সে আপনার মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতাকে কাজে লাগাবে । আর আপনি যদি তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে আমলের উপরে মজবুত থাকেন, তাহলে তার যাদুর শক্তি কোনোভাবে বেড়ে গেলেও সে পাত্তা পাবেনা । তা যথাযথ প্রদর্শন করতে পারবে না ।
মুখবন্ধ : আমি মোটেই এই দাবি করছি না যে, পূজার সময় জ্বীনদের যাদুশক্তি বাড়ে না । বরং আমি বুঝাতে চাচ্ছি, সকল প্রকার জ্বীনের শক্তি বাড়ে না । এবং আপনার সাথে থাকার জ্বীনটির শক্তি যে বাড়বেই; সেটাও নিশ্চিত নয় । পাশাপাশি আমি আরো বুঝাতে চাচ্ছি যে, একান্তই আপনার সাথে থাকা জ্বীনটির শক্তি কিছুটা বাড়লেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে এবং আমলের মাধ্যমে নিজেকে শক্ত রাখলে, সে আপনাকে খুব বেশি ঘায়েল করে ফেলতে পারবে না। আর এর বিপরীতে অতিরিক্ত ভয় পেলে ও মনোবল হারিয়ে ফেললে— সে ডিস্টার্বের মাত্রা বাড়িয়ে দিবে। সুতরাং অতিরিক্ত ভয় মোটেই পাওয়া যাবে না । তবে হ্যাঁ, সতর্কতা অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে।
পূজার সময় জ্বীন শয়তানের ‘শক্তি বাড়ে’ বলাটাও আসলে যথাযথ নয় । বরং বলা উচিত— এরা শক্তির প্রদর্শন বাড়িয়ে দেয় । উদাহরণস্বরূপ : আমাদের দেশের পাতি নেতাদের কথাই ধরুন না! এদের শক্তি যদি থাকে চার আনা, তার চ্যালা চামুণ্ডারা যখন তাকে ফুলের মালা গলায় দিয়ে অমুক ভাই তমুক ভাই বলে স্লোগান দেয়— তখন তার পা যেন মাটিতে পড়ে না । নিজেকে সে চার গুণ চার, সমান ষোল আনা শক্তিধর ভাবতে শুরু করে । জ্বীন শয়তানের ব্যাপারটিও সেইম । আপনি যখন তাকে অনেক বেশি শক্তিশালী ভাবতে শুরু করবেন, পূজার সময় তার শক্তি অনেক বেড়ে যায় বলে ভীত হয়ে পড়বেন, তার শক্তি বাড়ুক বা না-ই বাড়ুক— পাতি নেতার মতো সে চার আনা শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও ষোলো আনার ভাব দেখাতে চাইবে ।
এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, একে তো পাতি নেতার চ্যালা চামুণ্ডার মত মুশরিকরা পূজা-অর্চনা করে এই সময় তার অহমিকার লেভেল বাড়িয়ে দিয়েছে, উপরন্তু আপনিও কি এখন তার শত্রুপক্ষ হওয়া সত্ত্বেও তার সামনে কাঁচুমাচু ভাব ও নিজের দুর্বল মনোভাব প্রদর্শন করে তার অহমিকা আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দিবেন? নাকি বুক ফুলিয়ে বাহু দুলিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলবেন! যাতে উক্ত পাতি শয়তানের যে চার আনার ক্ষমতা আছে— আপনার দৃঢ় মনোবল দেখে সেটুকুরও প্রদর্শন ও প্রয়োগের সাহস হারিয়ে ফেলে? কোনটা বুদ্ধিমান যোদ্ধার কাজ হবে? নাকি ভুলেই গিয়েছেন যে, এটি শয়তান ও আপনার মাঝে একত্ববাদের লড়াই । আর লড়াইতে জিততে হয়— বুদ্ধির জোরে।
শয়তানকে শক্তি যা দেয়ার, তা ইতিমধ্যেই আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন । নতুন করে আর শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ নেই। তবে যখন পূজা অর্চনা, তন্ত্র-মন্ত্র ও কীর্তন গাওয়া হয়— তখন তার অহংকার বেড়ে যায় । ফলে সে তার existing শক্তির প্রয়োগ ও প্রদর্শন বাড়িয়ে দেয়। যদিও সে নিজেই জানে, তাকে পূজা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সে পূজা তথা ইবাদতের উপযুক্ত নয় । যা সে কিয়ামতের মাঠে স্বীকারও করবে । সেদিন সে স্পস্ট বলবে, “তোমরা যে ইতিপূর্বে আমাকে আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করেছিলে, (আজ) আমি তা প্রত্যাখ্যান করলাম।” দেখুন— সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ২২ ।
তথাপি সব জেনেবুঝেও পূজা চলাকালীন তাৎক্ষণিক তার মধ্যে অহমিকার পরিমাণ বেড়ে যায় বিধায়; সে এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা ক্ষমতার প্রদর্শন বাড়িয়ে দেয় । এবং মুশরিকদেরকে এহেন শিরকী কর্মকাণ্ডে সদা লিপ্ত রাখার জন্য কখনো কখনো মূর্তির মধ্যে বাস্তবেই জ্বীন-শয়তান প্রবেশ করে, কখনো আবার জ্বীন-শয়তানরাই মূর্তির রুপ ধারণ করে বিভিন্ন অলৌকিককতা দেখায় । এটাই হলো মূল বিষয় ।
হিন্দুদের পূজা চলাকালীন জ্বীন-যাদুর রোগীদের করণীয়:
১। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, মানুষ যখন সিজদা দেয়, শয়তান তা দেখে অনেক বেশি কষ্ট পায়। তাই শয়তান ও অমুসলিম জ্বীনদের শক্তি নষ্ট করার জন্য আপনি বেশি বেশি সিজদার আয়াত তিলাওয়াত ও সিজদা করতে পারেন ।
২। পূজার সময় বিধর্মীরা আল্লাহর একত্ববাদে শিরক করে শয়তানকে খুশি করে। আপনি তার বিপরীতে তাওহীদ ও তাহলীলের এর আয়াত, শিরকের আয়াত এবং জাহান্নামে মুশরিকদের ভয়াবহ পরিণতির আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে শয়তানকে অখুশী করুন। এবং আল্লাহকে খুশি করুন।
আয়াত লিস্ট— https://muftialamin.com/categories/pdf/
৩। আল্লাহ পাক আশ্রয় না দিলে শয়তানের চক্রান্ত থেকে আমাদের বেঁচে থাকার উপায় নাই । অতএব, বেশি বেশি ‘ইস্তেআযা’ তথা আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম পড়ে আল্লাহর কাছে শয়তানের চক্রান্ত থেকে আশ্রয় চাইতে থাকুন।
৪। সূরা কাহাফের পুরোটা পড়তে পারলে ভালো । অথবা কমপক্ষে শুরু শেষের দশ আয়াত পড়বেন । সেটাও না পারলে অন্তত প্রথম দশ আয়াত পড়বেন ।
৫। রক্ত ও পশু বলি দেওয়ার মাধ্যমে করা যাদু নষ্টের অডিও রুকইয়াহ শুনতে পারেন ।
রুকইয়াহ লিংক—
৬। আয়াতে তাওহীদ ও তাহলীলের রুকইয়াহ শুনতে পারেন।
আয়াতে তাওহীদ— https://muftialamin.com/ayatut-taouhid/
আয়াতে তাহলীল— https://muftialamin.com/ayatut-tahlil/
৭। পূজা মন্ডপে গাইরুল্লাহ গুণগান ও পবিত্রতা গাওয়া হবে, এর বিপরীতে আপনি আল্লাহর গুণগান ও পবিত্রতা গাইতে পারেন । বেশি বেশি “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি” এই তাসবীহ পাঠ করতে পারেন ।
৮। মানুষ ও জ্বীন জাদুকরদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা ভরে অভিশাপ দিতে পারেন ।
বিস্তারিত : https://muftialamin.com/curse/
৯। শয়তান ও মূর্তির পূজারীরা আমাদের মহান রবের ক্ষমতার মধ্যে অন্যকে শরীর করার ঘোষণা দিবে । আর এর বিপরীতে আপনি মহান রবের একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে— বেশি বেশি কালিমা তাওহীদ ও কালিমা শাহাদাত পাঠ করুন।
১০। আল্লাহর সৃষ্ট দুনিয়াতে তাঁরই সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে মহা কবীরাহ গুনাহ করা হচ্ছে, দুনিয়ার উপরে এর ভয়াবহ পরিণতি থেকে যেন আল্লাহ পাক আপনাকে ও আপনার পরিবারকে হেফাজত করেন এই নিয়তে— বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করুন।
আপনার দৈনন্দিন এর মাসনূন আমল ও অন্যান্য রুকইয়াহ আমলের পাশাপাশি এই দশটি সতর্কতা অবলম্বন করলেই আশা করি পূজার কারণে আপনাকে অতিরিক্ত কোন ঝামেলা তো করতে পারবেই না, উল্টো আপনাকে আছরকারী শয়তানটি মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়বে—ইনশাআল্লাহ্ ।
পরিশেষে একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা জরুরী মনে করছি যে, এই সময় ইতিপূর্বে যারা আক্রান্ত তাদের সমস্যা যতটা না বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে নতুন করে আক্রান্তদের সংখ্যা । কারণ অনেকেই জেনে না জেনে; কৌতুলবশত পূজা মন্ডপে যাতায়াত করে, পূজা দেখতে যায়, এমনকি নাঊজুবিল্লাহ কেউ কেউ পূজার প্রসাদ পর্যন্ত খায়, আর এতে তারা ভয়াবহভাবে জ্বীন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে । আপনার পরিবার কিংবা পরিচিতজন যেন এই ভয়াবহ বিপদের মধ্যে না পড়ে, সে বিষয়ে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে । উল্লেখ্য যে, পূজার প্রসাদ তথা মূর্তি ও প্রতিমার সামনে উৎসর্গিত খাবার স্পস্ট হারাম। কোন মুসলমান কখনোই তা ভক্ষণ করতে পারে না।