হাদীসের আলোকে বদনজরের ক্ষতিসমূহ

রোগীর কাছে শুরুতেই তার রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসা গ্রহণ সহজ হয় । কিন্তু রোগী যখন তার অজান্তেই কোনো রোগে ভুগে তখন তার চিকিৎসা সহজ তো দূরের কথা! শুরুই যেহেতু হয়না; বিনা চিকিৎসায়‌ই সে ধুঁকে ধুঁকে মরে। বদনজরের বিষয়টিও এরকম। এটি একটি সুপ্ত ঘাতক । মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয় । ভিক্টিম টের‌ও পায়না যে, কীসের কারণে তার এ দশা হচ্ছে । যেকারণে ভুক্তভোগী তার সমস্যা থেকে বের হ‌ওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করলেও ‘বদনজর ও তার চিকিৎসার কথা’ একবার‌ও ভাবেনা ।

কাউকে জ্বীন আছর করলে রোগীর চিল্লাচিল্লি বা উল্টাপাল্টা কর্মকাণ্ডে সহজেই তা বুঝা যায় । কিন্তু বদনজরের লক্ষণগুলো সবার কাছে ততটা স্পস্ট না হ‌ওয়ায় বছরের পর বছর বদনজরে আক্রান্ত থাকার পরেও রোগী অনেকসময়ই তা বুঝতে পারেনা ।

বদনজর জ্বীনের জন্য‌ও এক মহা অ-স্ত্র । এমন কোনো রোগী পাইনি যাকে জ্বীন আছর করেছে কিন্তু তাকে নজরের মাধ্যমে ক্ষতি করেনি । এসব দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলে মাঝেমধ্যে মনে হয় জ্বীনের চেয়েও বদনজরের সমস্যা বেশি মারাত্মক।

বদনজর সম্পর্কিত হাদীসগুলো আপনি যত বেশি পড়বেন, তত‌ই আশ্চর্য হতে থাকবেন। এ সম্পর্কিত হাদীসের উপরে সামগ্রিকভাবে গবেষণা করলে দেখবেন যে, এহেন কোনো রোগ বা ক্ষতি নেই যা এর কারণে হ‌তে পারেনা ।

হাদীসের আলোকে বদনজরের প্রভাবে সৃষ্ট কিছু রোগ ও সমস্যার কথা নিচে তুলে ধরছি।

১) বদনজরের প্রভাবে বাচ্চারা কান্নাকাটি করতে পারে। মুসনাদে আহমদ — ২৪৪৪২ ।

২) বদনজরের কারণে শরীরে জ্বর আসতে পারে।

হাদীস— রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কোঁকাচ্ছিলেন । জিবরীল (আ.) আসলেন এবং তাকে বদনজরের রুক‌ইয়াহ করলেন। সুনানে ইবনে মাজাহ— ৩৫২৭ ।

৩) বদনজরের কারণে চেহারায় কালো দাগ বা ব্রণ ইত্যাদি হতে পারে।

হাদীস— একজন মহিলার চেহারায় কালো দাগের চিহ্ন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বদনজরের রুক‌ইয়াহ করার পরামর্শ দিয়েছেন। সহীহ বুখারী — ৫৭৩৯ ।

৪) বদনজরের কারণে ভিক্টিম তাৎক্ষণিক বেহুঁশ হয়ে যেতে পারেন । মুসনাদে আহমাদ— ১৫৭০০ ।

৫) বদনজরের কারণে মৃত্যু হতে পারে। মুয়াত্তা মালিক— ২৭০৭ ।

৬) বদনজরের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। সহীহ মুসলিম— ২১৯৮ ।

এরকম আরো বহু সংখ্যক হাদীস রয়েছে যেখানে বদনজরের কারণে হয়ে থাকে এরকম বিভিন্ন রোগ ও সমস্যার কথা বলা হয়েছে।

আর বদনজরের এ ভয়াবহতার কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও জ্বীন এবং মানুষের বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন । সুনানে নাসাঈ— ৫৪৯৪, সুনানে ইবনে মাজাহ—৩৫১১ ।

আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে মানুষ এবং জ্বীনের নজর ও হিংসার প্রভাব থেকে হেফাজত করেন। আমীন ।

error: Content is protected !!