যাদুর অনেকগুলো প্রকার রয়েছে । যেমন— সিহরুত তাফরীক বা বিচ্ছেদের যাদু । সিহরুল জিনুন বা পাগল বানানোর যাদু, সিহরুল মারাদ বা অসুস্থ বানানোর যাদু, সিহরুন নাঝীফ বা রক্তক্ষরণের যাদু ইত্যাদি ইত্যাদি । পাশাপাশি যাদু কার্যকর করারও রয়েছে বিভিন্ন পদ্ধতি । যেমন— সিহরুল মা’কুল বা খাওয়ানোর মাধ্যমে করা যাদু, সিহরুল মাশরুব বা পান করানোর মাধ্যমে কৃত যাদু, সিহরুল মারশুশ বা ছিটানোর মাধ্যমে করা যাদু ইত্যাদি ইত্যাদি ।
ঠিক কোন পদ্ধতিতে ও কী উদ্দেশ্যে যাদু কার্যকর করা হয়েছে তা বুঝে (যদি সম্ভব হয়) সে অনুযায়ী “রুকইয়াহ” করা হলে চিকিৎসা সহজ হয় এবং আল্লাহ চাইলে দ্রুত সমাধানের আশা করা যায় । যেকারণে— আপনি যাদুতে আক্রান্ত হয়ে থাকলে; ভালো হয় অভিজ্ঞ কোনো আলেম রাক্বীর শরাণাপন্ন হয়ে তার কাছে এক সেশন ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ করে তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী আমল করা। একান্তই যাদের সরাসরি রুকইয়াহ করানোর সুযোগ নেই— তাদের জন্য আজকের এই পরামর্শ ।
নিম্নে প্রদত্ত পরামর্শগুলো ফলো করে আপনি নিজে নিজেও যাদু নষ্ট করতে পারবেন—ইনশাআল্লাহ্ ।
১। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পরে মাসনূন দোয়া পড়বেন ।
প্রবাদ আছে— “প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম” । যে কারণে প্রত্যেকটি মানুষেরই উচিত জ্বীন-যাদু বিষয়ক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রতিকার না খুঁজে; আক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা খোঁজা । আর জ্বীন-যাদু ইত্যাদি প্যারানরমাল সমস্যার প্রতিরোধমূলক দুর্ভেদ্য দুর্গ হচ্ছে— “সকাল-সন্ধ্যার মাসনূন দোয়া” ।
সত্যাবাদী নবীর সত্য জবান থেকে বিভিন্ন দোয়ার ব্যাপারে ওয়াদা আছে যে, সেগুলো ফজরের পরে পড়া হলে মাগরিব পর্যন্ত আল্লাহ পাক সকল প্রকার অকল্যান থেকে হেফাজত করবেন এবং মাগরিবের সময় পড়া হলে পরবর্তী ফজর পর্যন্ত আল্লাহ পাক হেফাজত করবেন । কিছু দোয়া রয়েছে যা ঘুমানোর সময় পড়া হলে সারারাত আল্লাহ পাক তাকে ও তার পরিবারকে ফেরেশতা নিয়োজিত রেখে হেফাজত করবেন ।
> দোয়াগুলো সংক্ষিপ্ত একটি লিস্ট এই লিংকে পাবেন— মাসনূন দোয়া
২। দৈনিক একবার বা কমপক্ষে প্রতি তিন দিনে একবার সূরা বাকারা তিলাওয়াত করবেন ।
যাদু নষ্ট করার সবচেয়ে কার্যকরী আমল হচ্ছে— সূরা বাকারার তিলাওয়াত । যেকারণে প্রত্যেক যাদুতে আক্রান্ত রোগীর উচিত প্রতিনিয়ত এই সূরা পুরোটি তিলাওয়াত করা । এক সাথে পুরোটা পড়া সম্ভব না হলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কয়েক ধাপে পড়লেও হবে । তাও সম্ভব না হলে তিন দিন মিলিয়ে একবার পুরো সূরাটি তিলাওয়াত করা । তিলাওয়াত শেষে যাদু নষ্টের নিয়তে নিজ শরীরে ফুঁ দেয়া, উভয় হাতে সামান্য থুথুর সাথে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীর মুছে নেয়া, পানিতে ফুঁ দিয়ে বেশি বেশি সে পানি পান করা এবং গোসলের পানিতে ফুঁ দিয়ে তা দিয়ে গোসল করা ।
একান্ত নিজে পড়া সম্ভব না হলে— অন্য কারো থেকে পূর্ণ সূরার তিলাওয়াত শোনা । সেটাও সম্ভব না হলে কমপক্ষে পূর্ণ সূরার রেকর্ডেড তিলাওয়াত হলেও শোনা । পাশাপাশি নিজে সূরা বাকারার নিম্নোক্ত দশ আয়াত তিলাওয়াত করা । এবং তিলাওয়াত শেষে উপরে দেয়া পরামর্শ ফলো করা ।
সূরা বাকারার দশ আয়াত—
- ১) প্রথম চার আয়াত
- ২) আয়াতুল কুরসি ও পরবর্তী দুই আয়াত
- ৩) শেষ তিন আয়াত
৩। প্রতি ফরজ নামাজের পরে এবং ঘুমের পূর্বে সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস এবং সূরা ত্বহা সম্ভব হলে পূর্ণ সূরা বা এ সূরাগুলোর নির্ধারিত আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবেন ।
সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস এবং সূরা ত্বহায় আল্লাহ পাক যাদুর ব্যাপারে আলোচনা করেছেন । যদিও সূরাহগুলো বেশ বড় বড়; তবুও কারো পক্ষে সম্ভব হলে সূরাহ বাকারার পাশাপাশি এই সূরাগুলোও পুরোটা পড়ার চেষ্টা করা। সেটা সম্ভব না হলে এই সূরাগুলোসহ কুরআনের অন্যান্য যে সকল সূরার মধ্যে আল্লাহ পাক যাদু সংক্রান্ত আলোচনা করেছেন— বাছাই করে করে কেবল যাদু সংক্রান্ত সে আয়াতগুলো বারবার তিলাওয়াত করবেন । যাদু সংক্রান্ত আয়াতগুলো যত বেশি বেশি তিলাওয়াত করা হলে— যাদুর ভিত কেঁপে উঠবে, যাদুর শক্তি দূর্বল ও নড়বড়ে হয়ে যাবে— ইনশাআল্লাহ্ ।
যাদু সংক্রান্ত আয়াত লিস্টের পিডিএফ কপি পেতে এখান ক্লিক করুন—آيات عن السحر
একান্তই উপরের পিডিএফ ফাইলে দেয়া সবগুলো আয়াত পড়া সম্ভব না হলে প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে এবং ঘুমের পূর্বে কমপক্ষে হলেও নিম্নোক্ত আয়াতগুলো পড়ুন ।
- ১। সূরা আরাফ— ১১৭ থেকে ১২২
- ২। সূরা ইউনুস— ৮১ ও ৮২
- ৩। সূরা ত্বহা— ৬৯
৪। প্রতি ফরজ নামাজের পরে এবং ঘুমের পূর্বে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিলাওয়াত করুন ।
কুরআন শরীফের সর্বশেষ তিনটি সূরা । ছোট হওয়ায় শতকরা ৯৯.৯৯% মুসলামানেরই মুখস্ত এই সূরা তিনটি । রুকইয়াহ সংক্রান্ত অসংখ্য হাদীসে এই সূরা তিনটি পড়ার নির্দেশনা এসেছে । বিশেষ করে সূরা ফালাক ও নাস; নাযিলই হয়েছে— রসূলুল্লাহ (স.) এর যাদু নষ্ট করা প্রসঙ্গে ।
অতএব, যাদুতে আক্রান্ত রোগীগন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এই সূরা তিনটি খুব বেশি বেশি পড়বেন । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে পড়বেন । বিশেষ করে ফজর ও মাগরিবের নামাজের পরে এবং ঘুমের পূর্বে অবশ্যই পড়বেন । সূরা তিনটি পড়ে উভয় হাতে সামান্য থুথুর সাথে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীর মুছে নিবেন । পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করবেন । হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে— রসূলুল্লাহ (স.) বিভিন্ন কিছু পড়ে রুকইয়াহ করতেন, যখন সূরা ফালাক ও নাস নাযিল হলো এরপর থেকে সবকিছু বাদ দিয়ে এই দুই সূরা দিয়ে রুকইয়াহ (ঝাড়ফুঁক) করতেন । সুনানে তিরমিযী (২০৫৮)
৫। যাদু নষ্টের গোসল । সাতদিন বা চৌদ্দ দিন যাদু নষ্টের গোসল করুন ।
পূর্ণ সূরা বাকারা তিলাওয়াত করে ফুঁ দেয়া পানি বা কমপক্ষে সূরা বাকারার নির্দেশিত দশ আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া পানি, যাদু সংক্রান্ত সকল আয়াত বা কমপক্ষে সূরা আরাফ, ইউনুস এবং ত্বহার বিশেষ আয়াতগুলো এবং সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে সে পানি দিয়ে গোসল করবেন । যেহেতু দরুদ শরীফ পড়া না হলে আমল আসমানে পৌঁছে না, সেজন্য শুরু ও শেষে একবার করে দরুদ শরীফ পড়ে নিবেন । দরুদে ইবরাহীম (নামাযে যে দরুদ পড়া হয়) পড়লে ভালো । সংগ্রহ করা সম্ভব হলে প্রতি দিনের গোসলের পানির সাথে সাতটি করে বরই পাতা বেটে মিশিয়ে নিবেন । পাশাপাশি জমজমের পানি, বৃষ্টির পানি মিশিয়ে নিতে পারলেও ভালো হয় ।
গোসলের পুরো নিয়ম পদ্ধতি পাবেন এই লিংকে—https://muftialamin.com/jadu-noste-boroi-pata/
৬। দিনের যেকোন সময় একবার এবং রাতের যেকোন সময় একবার যাদু নষ্টের অডিও রুকইয়াহ শুনুন ।
যারা তিলাওয়াত করতে পারেননা তারা যাদু সংক্রান্ত আয়াতগুলো তিলাওয়াতের পরিবর্তে কারো কাছ থেকে এর তিলাওয়াত শুনবেন । যেহেতু নিয়মিত তিলাওয়াত শুনানোর মতো ব্যক্তি পাওয়া কঠিন, সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে আয়াতগুলোর রেকর্ডেড তিলাওয়াত শুনতে পারেন । বিশেষ করে নামাজ বন্ধের দিনগুলোতে যেহেতু মহিলা রোগীদের কোন প্রকার তিলাওয়াতের সুযোগ থাকেনা, তারা এই সময়ে গুরুত্বের সাথে অডিও তিলাওয়াত শুনবেন ।
যাদু নষ্টের রুকইয়াহ— https://muftialamin.com/ruqyah-for-destroy-the-black-magic/
৭। সকালে খালি পেটে ও রাতে ঘুমানোর পূর্বে যাদু নষ্টের পড়া পানি পান করুন ।
আপনি যাদু নষ্টের জন্য সরাসরি রুকইয়াহ করে থাকলে রাক্বী কর্তৃক পড়ে দেয়া যাদু নষ্টের পানি পান করুন । অথবা নিম্নোক্ত লিংক ফলো করে পানি পড়া তৈরি করে সকালে খালি পেটে ও রাতে ঘুমানোর পূর্বে পান করুন ।
লিংক— https://muftialamin.com/water-for-destroy-the-sihr/
বিশেষত আপনি পেটের যাদুতে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এই লিংকে দেয়া পুরো প্রসেসটি ফলো করুন । এটা করার আগে অভিজ্ঞ রাকীর পরামর্শ নিয়ে করলে ভালো হয় । লিংক— https://muftialamin.com/about-stomack-black-magic/
৮। স্বপ্নে যাদুর বস্তু খাওয়ানো হলে তা বন্ধের জন্য এই লিংকে দেয়া পরামর্শ ফলো করুন ।
লিংক— https://muftialamin.com/eating-in-the-dream/
৯। হিজামা করুন ।
আপনার রাক্বী প্রয়োজন মনে করলে বা আপনাকে পরামর্শ দিলে তার নির্দেশিত পয়েন্টে হিজামা করুন । বিশেষত খাওয়ানো বা পান করানোর যাদু, মাথা কেন্দ্রিক করা যাদু, শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টে যাদুর গিট থাকলে অবশ্যই হিজামা করা উচিত ।
১০। ঘরে যাদু থাকলে নিম্নোক্ত লিংকে দেয়া নিয়ম ফলো করে তা নষ্ট করুন ।