রোগী হঠাৎ একটি অদৃশ্য আওয়াজ শুনতে পেল— “তোর সৃষ্টিকর্তা তোকে ধরা দিয়েছে, তোর আর নামাজ পড়তে হবে না। পুকুর পাড়ে আয়, তোকে ইশকের আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি বানাবো (!)”
কুরআন হাদীসের জ্ঞান শূন্য রোগী তো সৃষ্টিকর্তার ‘ধরা’ (!) পেয়ে খুশিতে গদগদ। সে উক্ত অদৃশ্য আওয়াজের আহবানে পুকুর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালো। এবার আওয়াজ এল— “চোখ বন্ধ কর”, বোকা রোগী সেটাও করল। কিছুক্ষণ পরে সে তার শরীরে শিরশির অনুভূতি পেলো । এভাবেই চোখ বন্ধ অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো । লম্বা সময়ে কোন আওয়াজ না পেয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলোনা। [শিরশির অনুভূতিটা মূলত জ্বীনের কারসাজি ছিলো ।]
ঘটনাটি আমার একজন প্রবাসী রোগীর। প্রবাসে থাকাকালীন তিনি তার আট বছর আয়ের সকল টাকা পয়সা বড় ভাইয়ের একাউন্টে পাঠিয়েছেন। যা তার ভাই খরচ করে ফেলেছেন । প্রবাসী ভাই দেশে আসার পরে টাকার হিসেব চাইলে, নিজের গা বাঁচাতে তার সেই ভাই-ই তাকে যাদু করেছে । [রুকইয়াহ করার পরে জ্বীনটি হাজির হয়ে এ সব তথ্য স্বীকার করেছে।]
এটি একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির যাদু । পরিভাষায় এ প্রকারের যাদুকে “সিহরুল হাওয়াতিফ” বলা হয়। এ ধরণের যাদুতে আক্রান্ত রোগী অদৃশ্যের আওয়াজ শুনতে পায়; যা মূলত যাদুর খাদিম জ্বীনের আওয়াজ । অনেকটা ‘সিজোফ্রেনিয়ার’ রোগীদের মত । তবে সিজোফ্রোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী আর সিহরুল হাওয়াতিফে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, সিজোফ্রোনিয়ার রোগী বাস্তব কোন আওয়াজ ছাড়াই মনের ভ্রান্তির কারণে তার কাছে আওয়াজ হচ্ছে বা সে আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে এমনটা মনে হয় । অপরদিকে সিহরুল হাওয়াতিফে আক্রান্ত রোগী বাস্তবেই জ্বীনের আওয়াজ শুনতে পায় ।
তবে সিহরুল হাওয়াতিফে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম । আমাদের সমাজে যারা আওয়াজ শুনতে পায় বলে অভিযোগ করে, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠই সিজোফ্রোনিয়ার রোগী । অবশ্য এ রোগের জন্যও বেশ ফলপ্রুসূ রুকইয়াহ চিকিৎসা রয়েছে । যদিও এ ধরনের রোগীদের লম্বা সময় ও একাধিক সেশন প্রয়োজন হয় ।
এর কাছাকাছি আরেক প্রকারের যাদু আছে— যেটাকে “সিহরুত তাখয়ীল” বলে । এই যাদুতে আক্রান্ত হলেও বাস্তবে ঘটেনি বা ঘটছেনা এমন বিষয় রোগীর কাছে ঘটেছে বলে মনে হয় । কোন দৃশ্য না দেখা সত্ত্বেও তার কাছে দেখেছে বলে মনে হয় । আওয়াজ না শুনেও তার কাছে শুনেছে বলে মনে হয় । এটা সিহরুল হাতিফও যেমন নয়, তেমনি সিজোফ্রোনিয়াও নয় ।
প্রসঙ্গ কথা— প্রয়োজনীয় পরিমান দ্বীনি জ্ঞান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপরে ফরজ । যত বড় বুজুর্গ এবং আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তিই হোক না কেন, নামাজ কোনোদিন মাফ হয় না । উপরোক্ত ঘটনার ভদ্রলোকের ইসলামের প্রসিদ্ধ এ বিধানটি জানা থাকলেও হয়তবা জ্বীনের চালাকি বুঝে ফেলতে পরতো, এবং দীর্ঘ একটা সময় তাকে মারাত্মক কষ্ট ও ভোগান্তিতে পড়তে হতো না ।