গতকাল মাগরিবের পরে সদ্য বিবাহিতা অল্প বয়সী একটি মেয়ের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। মেয়েটির রুকইয়াহ করে নতুন এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হলো । পেশেন্টের মূল সমস্যা ছিল পায়ে অস্থায়ী প্যারালাইসিস। অজানা কোন এক কারণে সম্পূর্ণ সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষটির ডান পা মাঝে মাঝেই অবশ হয়ে যায়, শক্তি পায়না, ভর দিতে পারেনা ইত্যাদি । ভাই ও মায়ের সাহায্য নিয়ে তাদের কাধে ভর করে, কোনোমতে পা টেনে টেনে হেটে সেন্টারে এসেছে। অবস্থা দেখে ভেবেছি শারীরিক রোগ; শিফা এবং হাড় সংক্রান্ত আয়াত পড়ে অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে বিদায় করে দিবো । তবুও চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী লম্বা হিস্টোরি নিলাম । কিছুটা সন্দেহ হওয়ায় তিলাওয়াত শুরু করলাম । ৪/৫ মিনিট তিলাওয়াত করতে না করতেই জ্বীন হাজির ।
নাম জিজ্ঞাসা করলাম, বলল-ইরফান । ধর্ম বলল ইয়াহুদী । খুব ভাব আর অহংকার নিয়ে প্রশ্নগুলির উত্তর দিচ্ছিল । আমি তাকে খুব নম্রভাবে মুসলিম হওয়ার দাওয়াত দিলাম । ইসলাম হক ধর্ম তা বুঝানোর চেষ্টা করলাম । সে ইসলামের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল । তবুও আরো বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম । হঠাৎ করেই কথার ফাকে আমার গলা চেপে ধরলো । আমি যাস্ট হাতটা সরিয়ে ধমকের স্বরে স্বজোরে সূরা ইয়াসিনের ৬৩ নম্বর আয়াতাংশ– “হা-যিহী জাহান্নাম” এতটুকু তিলাওয়াত করলাম । ব্যাস! কাজ শেষ। আল্লাহর রহমতে বাঘ এবার বিড়াল হয়ে গেল । শক্তি প্রদর্শন বাদ দিয়ে এবার কান্নাকাটি আরম্ভ করলো। অতঃপর আয়াতুল কুরসী এবং সাথে অন্যান্য কিছু আয়াত তিলাওয়াত করলাম ।
কিছুক্ষণ এভাবে তিলাওয়াত করার পরে সূরা হিজরের ৩৪ ও ৩৫ নং তিলাওয়াত করে পায়ে ফুঁ দিলাম। রোগী অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়লো । মূলত ‘পা’ ই ছিল রোগীর জ্বীনের আবাস স্থল । যেকারণেই জ্বীন যখন শরীরের কন্ট্রোল নিত, মেয়েটির পা প্যারালাইজড হয়ে যেত । কিছুক্ষণ পরে পড়া পানি স্প্রে করলে হুশ ফিরে আসলো ।
জ্বীনটি আসলেই চলে গিয়েছে কিনা চেক করার জন্য আরো কিছুক্ষণ তিলাওয়াত করলাম । কারণ প্রথমবারে যে সমস্ত জ্বীন চলে যায়, বেশিরভাগই প্রকৃতপক্ষে যায়না, বরং যাওয়ার ভান করে এবং ধোকাবাজি করে । জ্বীন মূলত বডির মধ্যেই থাকে, যাস্ট সাময়িকের জন্য কন্ট্রোল ছেড়ে দেয় । যেজন্য রোগী সুস্থ হওয়ার পরেও আমরা প্রাথমিক কনফার্ম হওয়ার জন্য পুনরায় চেক পুনরায় তিলাওয়াত করি । ‘প্রাথমিক কনফার্ম’ এজন্য বললাম, অনেক সময় প্রথমবার রুকইয়াহতে জ্বীন চলে যাওয়ার ভান করে শরীরের মধ্যেই ঘাটি (হুসুন) ঘাঁটি গেড়ে লুকিয়ে থাকে । অনেক সময় তা চেক তিলাওয়াতেও প্রকাশ পায়না । সেজন্যই জ্বীন চলে যাওয়ার পরেও রোগীকে কিছুদিন সেলফ রুকইয়াহ করতে হয় । যাতে করে লুকিয়ে থাকলে প্রকাশ পেতে বাধ্য হয় । অথবা পুনরায় শরীরে প্রবেশের চেষ্টা করলে যেন বাধাগ্রস্ত হয় ।
যাহোক, চেক তিলাওয়াতেও কিছু না পেয়ে রোগীকে আপাতত কিছু নির্দেশনা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম । অন্যের উপরে ভর করে আসা রোগী, নিজ পায়ে হেঁটে বাড়ি চলে গেল। সকল প্রসংশা একমাত্র রব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য। শুকরান লাকা ইয়া রব! আলহামদুলিল্লাহ।
মোরাল অফ দ্যা স্টোরি– শুধু প্যারালাইসিস কেন শারীরিক-মানসিক এমন কোন সমস্যা নেই যা জিনের কারণে হতে পারে না । অতএব, দীর্ঘদিন মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নেয়ার পরেও আপনার শারীরিক বা মানসিক যে সমস্যা গুলোর সমাধান মিলছে না, সতর্কতাঃ স্বরূপ অবশ্যই তার জন্য কুরআনিক চিকিৎসা (রুকইয়াহ) নিন ।