‘ইস্তেহাযা বা রক্ত স্রাবের যাদু’— শুনতে অদ্ভুত শোনা গেলেও এটি যাদুর বেশ প্রসিদ্ধ একটি প্রকার । যার প্রভাবে ভিক্টিমের আনকন্ট্রোলড রক্ত স্রাবের সমস্যা হয়ে থাকে, যা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়েও আরোগ্য হয় না ।
ইস্তেহাযা কী?
ইস্তেহাযা হলো, হায়েজের নির্ধারিত দিনগুলোর বাহিরে নারীদের রক্ত প্রবাহিত হওয়া । অন্য ভাষায় বললে, কোনো মহিলার তিনদিনের কম বা দশ দিনের বেশি সময় ধরে রক্তস্রাব হওয়া ।
সাধারণত—
- ১) অসুস্থ বানানোর যাদু (সিহরুল মারাদ)
- ২) বিবাহ বিচ্ছেদের যাদু (সিহরুত তাফরীক)
- ৩) অথবা বিবাহ বন্ধের যাদু (সিহরু তা’তীলিন নিকাহ)
– এর কোনো একটির সহায়ক হিসেবে এ যাদু করা হয়ে থাকে ।
- ৪) এছাড়া রোগীর সাথে থাকা আশিক জ্বীনও রোগীকে অন্য কারো সঙ্গী হওয়ার থেকে বাধা প্রদানের জন্য এটি করে থাকে।
এর আবার দু’টি ধরন রয়েছে :
- ১) সর্বদা স্রাব চলতে থাকে ।
- ২) শুধুমাত্র বিবাহের প্রস্তাব আসলে বা স্বামী কাছে আসলে তখন শুরু হয় ।
✓এক নম্বরটি অসুস্থ বানানোর যাদুর প্রাথমিক ধাপ হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রাখে । যদিও ভিন্নও হতে পারে ।
✓দুই নম্বরটি বিবাহ বিচ্ছেদের যাদু অথবা বিবাহ বন্ধের যাদু হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রাখে । যদিও ভিন্নও হতে পারে ।
আরবীতে এ প্রকারের যাদুকে ‘সিহরুন নাঝীফ বা সিহরুল ইস্তেহাযা’ বলা হয়। নাম দেখেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে, এ প্রকার যাদু কেবলমাত্র মহিলাদের জন্য করা হয়ে থাকে ।
অবশ্য কখনো কখনো ‘সিহরুন নাঝীফ’ সিহরুল ইস্তেহাযার চেয়ে আরেকটু ব্যাপক অর্থেও ব্যবহৃত হয় ।
‘নাঝীফ’ এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে রক্তক্ষরণ । যে কারণে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যেকোনো রক্তক্ষরণের যাদুর ক্ষেত্রেও এই নাম (‘সিহরুন নাঝীফ’) ব্যবহার হতে পারে । যেমন নাক দিয়ে রক্তক্ষরণের যাদুরও পারিভাষিক নাম ‘সিহরুন নাঝীফ’ । যদিও এর আরেকটি বিশেষ নাম আছে— ‘সিহরুর রুআ’ফ’।
পুরুষদের বেলায় ‘সিহরুন নাঝীফ’ বা ইস্তেহাযার যাদুর কাছাকাছি যাদু হচ্ছে— ‘রবতুন নাঝীফ’। এতে আক্রান্ত রোগী স্ত্রীর কাছাকাছি গেলেই তার ‘ইজাকুলেশন’ হয় ।
পুরুষদের বেলায় সাধারণত—
- ১) নিজের সাথে থাকা মহিলা জ্বীন
- ২) স্ত্রীর সাথে থাকা আশিক জ্বীন
- ৩) অথবা বিচ্ছেদের যাদু
– এর কোনো একটির কারনে এমনটা ঘটে । ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন কোনো কারণও থাকতে পারে। নিজের সাথে থাকা জ্বীনের কারণে এমনটা হলে এ রোগীদের অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ এবং অশালীন স্বপ্ন দেখার সমস্যা থাকে ।
আশার বাণী হচ্ছে— আল্লাহ চাইলে এ যাদুর চিকিৎসা সহজ । রাক্বীর কাছে যাওয়া ছাড়াও নিজে নিজেই চিকিৎসা করা সম্ভব । এ ব্যাপারে সালাফদের থেকে বর্ণিত অন্যতম চিকিৎসা পরামর্শ হচ্ছে বরই পাতার গোসল করা । অবশ্য রোগীর সাথে থাকা জ্বীন এটা করে থাকলে তখন বিষয়টি জটিল হতে পারে ।
দৃষ্টি আকর্ষণঃ রক্ত স্রাব যাদুর কারণেও হতে পারে এর মানে কখনোই এটা নয় যে, রক্ত স্রাবের সমস্যা মানেই সেটি যাদু । বরং রক্ত স্রাবের সমস্যা নিয়ে কেবলমাত্র তখনই আপনার চিন্তিত হওয়া উচিত যখন দেখবেন—
১ | দীর্ঘদিন যাবত অতিরিক্ত পরিমাণে স্রাব যাচ্ছে যা অভিজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের দীর্ঘ চিকিৎসায়ও তা ভালো হচ্ছে না ।
২ | এটি আপনার বিবাহে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে । অর্থাৎ এ রোগে আক্রান্ত থাকার কারণে আপনি বিবাহ করতে ভয় পাচ্ছেন বা আগ্রহ হারাচ্ছেন ।
৩ | এটি আপনার দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্টের কারণ হচ্ছে, এমনকি তা বিবাহবিচ্ছেদের দিকে পৌঁছাচ্ছে ।
৪ | এর কারণে আপনি মারাত্মক অসুস্থ থাকছেন, কিন্তু ডাক্তার দেখিয়েও সুস্থ হচ্ছেন না ।
তথ্যসূত্র : সিহরুন নাঝীফ, রবতুন নাঝীফ এবং রবতের অন্যান্য প্রকারসহ এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা ‘ফাতহুল মুগীছ’ কিতাবে পাবেন ।
এছাড়াও আব্দুস সালাম বালি লিখিত রাক্বীদের মাঝে বেশ প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আস্সারিমুল বাত্তার’ কিভাবেও ‘সিহরুন নাঝীফ’ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত মূল আলোচনা পাবেন ।
উল্লেখ্য যে, ‘রুকইয়াহ সিহর’ বা ‘যাদুকরের গলায় ধারালো তরবারি’ নামে কিতাবটির বাংলা পাওয়া যায়। কিতাবটি সকলেরই পড়া উচিত বলে মনে করি । সেখানে যাদুর আরো বিভিন্ন প্রকার সম্পর্কে জানতে পারবেন।
- ® আমার প্রকাশিতব্য রুকইয়াহ বিষয়ক বইয়ের পান্ডুলিপি থেকে।
- © কপি করা অনুমোদিত নয় ।