ঘরবাড়িতে সাপ দেখা গেলে তা মারার আগে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। দেখলেই হুট করে মেরে ফেলা যাবে না। তবে হ্যাঁ, হামলা করতে উদ্যত হলে তখন ভিন্ন কথা। কমপক্ষে তিনবার চলে যেতে সতর্ক করতে হবে। কারণ জ্বীনদের একটি শ্রেণি রয়েছে যারা সাপের আকৃতি ধারণ করে ঘুরে বেড়ায় । সহীহ ইবনে হিব্বান— ৬১৫৬ । রাবী, হযরত আবু ছা’লাবা খুশানী (রা.) ।
সাপ ভেবে অন্যায়ভাবে এদেরকে মেরে ফেললে মারাত্মক বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে, এমনকি এক সাহাবীকে তো এজন্য মৃত্যুবরণও করতে হয়েছিল। সহীহ মুসলিম — হাদীস নং — ২২৩৬ ।
জ্বীন সাহাবীদের যে দলটির কথা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কুরআন তিলাওয়াত শুনে মুসলমান হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে সর্বশেষ যে জ্বীন সাহাবী ইন্তেকাল করেছেন; ‘আমর ইবনে জাবির/তারিক জ্বিন্নী’ তিনিও অমুসলিম জ্বীনদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় সাপের আকৃতিতেই শাহাদাত বরণ করেছিলেন। এবং এ অবস্থায়ই তাকে দাফন করা হয়েছে।
মুসনাদে আহমাদ—২২৬২২, (সনদ দুর্বল) ।
এ প্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে সহীহ মুসলিম শরীফে একটি শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। যার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ—
খন্দকের যুদ্ধে একজন নববিবাহিত সাহাবী যোদ্ধা খনন কার্যে শরিক ছিলেন। নববিবাহিত হওয়ায় তিনি মধ্য দুপুরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুমতি নিয়ে ঘরে যেতেন । তেমনি কোন একদিন অনুমতি নিয়ে তিনি ঘরের উদ্দেশ্যে বের হলেন । কাছাকাছি গিয়ে নিজের নববধূকে ঘরের বাহিরে দরজায় দাঁড়ানো দেখে আত্মমর্যাদা বোধের আতিশয্যে তিনি স্ত্রীর দিকে তির তাক করে মারতে উদ্যত হলেন, হাতের ইশারায় ঘরের দিকে দেখিয়ে স্ত্রী বললেন, তির রেখে ঘরে গিয়ে দেখুন যে কি কারণে আমি বাহিরে বের হতে বাধ্য হয়েছি । উক্ত সাহাবী ঘরে গিয়ে বিছানার উপরে একটি পেঁচানো সাপ দেখতে পেলেন, তাৎক্ষণিক তির বের করে তিনি সাপটিকে ঘায়েল করলেন, সাপটিও মুমূর্ষু অবস্থায়ই উক্ত সাহাবীকেও হামলা করলো, হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, সাপ কিংবা তরুণ এ দু’জনের কে অধিক দ্রুত মৃত্যুবরণকারী ছিল, তা টের পাওয়া গেল না। (অর্থাৎ সাপটিকে মেরে সাহাবীও মারা গেলেন । এবং দু’জনই একসাথেই মৃত্যুবরণ করেছেন।)
বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলে তিনি বললেন— মদিনায় কতক জ্বীন রয়েছে, যারা ইসলাম কবুল করেছে তাই (সাপ ইত্যাদিরূপে) তোমরা তাদের দেখতে পেলে তিন দিন সতর্ক করবে, এরপরেও তোমাদের সামনে (তা) প্রকাশ পেলে তাকে মেরে ফেলবে। কেননা সে একটি (অবাধ্য) শয়তান, অর্থাৎ সে মুসলিম নয়।
সহীহ মুসলিম — হাদীস নং — ২২৩৬ ।
প্রসঙ্গক্রমে এ সম্পর্কিত আমার একজন রোগীর কেস হিস্ট্রি শেয়ার করছি ।
তখন ঢাকায় আমার নিজস্ব সেন্টার ছিল না, আমাকে দেখানোর জন্য ঢাকা থেকে একজন জ্বীনের রোগী বরিশাল সেন্টারে আসলেন । রোগী প্রেগনেন্ট ছিলেন। সাধারণত খুব বেশি জটিল পরিস্থিতি না হলে প্রেগনেন্সি অবস্থায় আমরা রুকইয়াহ করতে নিষেধ করি । কিন্তু উনার অবস্থা এতটাই জটিল ছিল যে, রুকইয়াহ না করলে মিসক্যারেজের প্রবল ঝুঁকি ছিল । জ্বীনটি বারবারই বাচ্চা নষ্ট করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছিলো । যে কারণে বাধ্য হয়েই প্রেগনেন্সি অবস্থায়ও তাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলাম ।
রোগী আসলে যথারীতি পেশেন্ট চেয়ারে বসিয়ে তাকে রুকইয়াহ শুরু করলাম । কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগীর শরীরে জ্বীন হাজির। এক পর্যায়ে রোগী চেয়ার থেকে ফ্লোরে নেমে সাপের মত মোচরাতে আরম্ভ করল । অবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম যে জ্বীনটি সাপ ক্যাটাগরির । এ জ্বীনের অ্যান্টিভেনম সূরা ত্বহার ২০ এবং ৬৬ নং আয়াত, সূরা আরাফ ১০৭ এবং সূরা শুআরার ৩২ নং আয়াত বারবার তিলাওয়াত করতে থাকলাম । দীর্ঘ তিলাওয়াতের এক পর্যায়ে জ্বীনটি অনেক কান্নাকাটি শুরু করলো এবং ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকলো ।
তিলাওয়াত বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলাম, রোগীর শরীরে কেন আসছ? উত্তরে সে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো ।
বলল, ছোটবেলায় রোগী এবং তার ভাই মিলে একটি সাপের বাচ্চাকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল, যা নাকি মূলত সাপের আকৃতিতে এই জ্বীনটিরই বাচ্চা ছিলো । প্রতিশোধ স্বরূপ রোগী প্রেগনেন্ট হওয়ার পরে জ্বীনটি তার বাচ্চাকে হত্যা করার জন্য এসেছে ।
রোগীকে ছোট বেলার কথা জিজ্ঞেস করলাম, সেও জানালো যে ঘটনা সত্য। ছোটো বেলায় সে এবং তার ভাই মিলে একটি সাপের বাচ্চাকে হত্যা করেছিল।
জ্বীনটিকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম, বললাম ওনারা তো বুঝতে পারেনি যে সাপটি আহলে জ্বীন ছিলো বা তোর বাচ্চা ছিলো, ওরা না বুঝে মেরেছে। সে বলল, তারা তো তাকে সরে যাওয়ার সুযোগ দেয়নি। এভাবে বিভিন্ন কথা বলে বুঝানোর পরে সাপটি যেতে রাজি হয়েছিল কিন্তু যায়নি । অবস্থা জটিল হওয়ায় রোগীকে আরো কয়েক সেশন রুকইয়াহ করার প্রয়োজন ছিলো, কিন্তু বিভিন্ন অসুবিধার কারণে তারা পরবর্তীতে আর চিকিৎসা কন্টিনিউ করতে পারেনি ।
প্রকৃতপক্ষে রাসূলের নির্দেশনা না মানার কারণেই আমরা বিপদে পড়ে থাকি । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সাপ দেখলে তাকে তিনবার (চলে যেতে) সতর্ক করা ব্যতীত মারতে স্পষ্ট নিষেধ করেছেন ।
সুনানু আবী দাঊদ— ৫২৫৬, সহীহ মুসলিম— ২২৩৬, মুয়াত্তা মালিক— ২৭৯৮, তিরমীযি— ১৪৮৪, ১৪৮৫ । কোন কোন বর্ণনায় তিনদিন সতর্ক করার কথাও বলা হয়েছে । সহীহ মুসলিম— ২২৩৬।
আশাকরি আজকে থেকে আমরা এ ব্যাপারে আরো সতর্ক হবো—ইনশাআল্লাহ্ । দুনিয়ার সকল জ্বীনগ্রস্থ মুসলিম-মুসলিমাহ ভাইবোনকে আল্লাহ মুক্তি দান করুন।