রুকইয়াহ রিভিউ
ভূমিকা—
আলোর পেছনে যেমন অন্ধকার থাকে, তেমনি প্রতিটি সফলতার পেছনে লুকিয়ে থাকে বহু ব্যর্থতার গল্প।
কিন্তু ব্যর্থতা যেহেতু মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক অভিজ্ঞতা, তাই তা সাধারণত মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় না। সে কারণেই ব্যর্থতার গল্পগুলো খুব কমই আলোচনায় আসে। অধিকাংশ সময় তা আড়ালেই থেকে যায়— সফলতার গল্পের ভারে চাপা পড়ে যায়।
মানুষ আনন্দ ভাগ করে নিতে চায় বলেই সফলতার গল্পগুলোই বেশি শেয়ার করে। পাঠক ও দর্শক-শ্রোতারাও সফলতার গল্পেই বেশি আগ্রহ দেখান। খুব কম মানুষই ব্যর্থতার গল্প পড়তে বা শুনতে আগ্রহী হন এবং সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
শুরুর কথা—
রুকইয়াহ করার পর কোনো নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান হলে, দীর্ঘদিন বিবাহ না হওয়া কোনো বোনের বিবাহ হলে, অথবা জ্বীন-যাদুর প্রভাবে অত্যন্ত অসুস্থ কোনো রোগী সুস্থ হলে—স্বভাবতই একজন চিকিৎসক হিসেবে আমাদেরও আনন্দ হয়। কারণ আল্লাহ তাআলা এই সুস্থতার পেছনে আমাকে উসিলা করেছেন।
বিশেষ করে যাদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত সংকটাপন্ন, যাদের চিকিৎসায় বহু পরিশ্রম ও সময় ব্যয় হয়েছে এবং যারা দীর্ঘদিন নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন—তাদের সুস্থতার সংবাদ আমাদের জন্য অনেক বেশি আনন্দদায়ক। সেই আনন্দ ভাগ করে নিতেই কখনো কখনো সফলতার সংবাদের সিকিভাগ—‘আই রিপিট, সিকিভাগ’—আপনাদের সাথেও শেয়ার করা হয়। হয়তো প্রতি মাসে এক-দু’টি, কিংবা কখনো তিন-চার মাসে এক-দু’টি।
এই ধারাবাহিকতায় বেশ কিছুদিন আগে দুটি সফলতার স্ক্রিনশট পেইজে শেয়ার করেছিলাম। এরপর লক্ষ্য করলাম, স্বাভাবিকের তুলনায় হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাপয়েন্টমেন্ট রিকোয়েস্ট ও ওয়েবসাইট বুকিং অনেক বেড়ে গেছে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন—যাতে কেউ ভুল প্রত্যাশা নিয়ে রুকইয়াহ করতে না আসেন।
মূল কথা—
রুকইয়াহ পরবর্তী কিছু মানুষের বিবাহ হওয়া, সন্তান লাভ করা বা সুস্থতার অর্থ কখনোই এটা নয় যে— বিবাহ হয় না এমন যত রোগীই আমাদের কাছে আসেন, রুকইয়াহ করলে সকলেরই বিবাহ হয়ে যায়; নিঃসন্তান যারাই আমাদের কাছে আসেন, রুকইয়াহ করে সবারই সন্তান হয়; দীর্ঘদিন অসুস্থ এমন রোগীদের মধ্যে যারাই আমাদের কাছে আসেন, সবাই সুস্থ হয়— না, কখনোই না। কোন চিকিৎসকের কাছেই এমনটা হয় না। কোন চিকিৎসাতেই হয় না ।
চিকিৎসা কোনো আলাদীনের চেরাগ নয় যে, হুকুম করলেই দৈত্য এসে সুস্থতা নিয়ে হাজির হবে। রোগ ও রোগীর ধরণ ও জটিলতার ওপর ভিত্তি করেই চিকিৎসা পদ্ধতি ও ফলাফল ভিন্ন হয়। একই চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিভিন্ন রোগীর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ফল আসে এবং সে অনুযায়ী সময়ও লাগে।
নিরাশার গল্প—
বর্তমানে আমার চিকিৎসাধীন এমন একজন রোগী আছেন, যিনি ইতিমধ্যে ১২টি সেশন নিয়েছেন। অনেকাংশে সুস্থ হলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। আরেকজন নিয়মিত আমল করেন এবং প্রতি ২–৩ মাস পরপর একটি করে সেশন নেন—এভাবে গত দুই বছর ধরে চিকিৎসাধীন। প্রথম ৩ মাসের মধ্যেই ৯৫% সুস্থতা সত্ত্বেও তাঁর শরীর থেকে জ্বীন এখনো সম্পূর্ণরূপে বের হয়নি।
আশার কথা—
তবে আলহামদুলিল্লাহ্— গুটিকয়েক নিরাশার গল্প থাকলেও আশার গল্পের রেশিও তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ্ । তবু এই নিরাশার ঘটনাগুলো উল্লেখ করছি কেবল আপনাদের বাস্তবতা বোঝানোর জন্য—যাতে কেউ ভুল প্রত্যাশা নিয়ে না আসেন । বুঝে শুনে সময় ব্যয় করুন। এবং বাস্তবতা মাথায় রেখে অর্থ খরচ করুন । আমি আপনার কাছে আমার সময় বিক্রি করছি । আপনার শত্রুকে পরাজিত করার জন্য রিস্ক নিচ্ছি, নিজেকে তার শত্রুতে পরিণত করে আপনাকে উদ্ধার করার লড়াই করছি—বিনিময়ে ফি নিচ্ছি ।
বান্দাকে আল্লাহ কখনো কখনো কাজে লাগান কখনো আবার নাও লাগাতে পারেন । আমাদের হাতে দোয়া এবং চেষ্টা ছাড়া বিন্দু পরিমাণও অতিরিক্ত কিছু নেই । সেই দোয়া এবং চেষ্টা আল্লাহ কারো ক্ষেত্রে কখনো কবুল করেন, আবার কারো ক্ষেত্রে কবুল নাও করতে পারেন । আপনি কোন দলের অন্তর্ভুক্ত হবেন তা অগ্রিম বোঝার উপায় নেই ।
তবে হ্যাঁ, আপনার সুস্থতায় আল্লাহ পাক আমাকে মাধ্যম বানালে আমার অত্যন্ত খুশি লাগবে। আখিরাতে কিছু ছাওয়াবের আশা বাড়বে । এবং আমার প্রতিটি রোগীর জন্য জ্ঞানের সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে দিয়ে এই খুশি ও ছাওয়াব প্রাপ্তির আশা চলমান আছে ও থাকবে—ইনশাআল্লাহ্।
সারসংক্ষেপঃ কোন সফলতার গল্প বা পজিটিভ রিভিউ দেখেই কারো কাছে সিরিয়ালের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় । পরিচয় পাওয়া মাত্রই হুট করে কারো কাছে চিকিৎসা নিতে আমি সব সময়ই নিরুৎসাহিত করি। বরং একজন রাকিকে দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করে; তার লেখালেখি, অডিও ভিডিওগুলো শুনে; ইস্তেখারা করে তার কাছে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত । এসব প্রসেস অবলম্বন করলে রাকি এবং রোগী উভয়ের মধ্যে আল্লাহ বরকত দিবেন ।