স্মরণ কর, যখন তিনি (আল্লাহ) তাঁর পক্ষ থেকে প্রশান্তির জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেছিলেন এবং আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলেন, তোমাদেরকে তা দিয়ে পবিত্র করার জন্য, তোমাদের থেকে শয়ত্বানী কুমন্ত্রণা দূর করার জন্য, তোমাদের দিলকে মজবুত করার জন্য আর তা দিয়ে তোমাদের পায়ের ভিত শক্ত করার জন্য। (সূরা আনফাল (৮), আয়াত-১১)
উপরোক্ত আয়াতটি বদরযুদ্ধকে কেন্দ্র করে নাযিল করা হয়েছে । আয়াতের মাধ্যমে আমরা জানতে পেলাম, আল্লাহ রব্বুল আলামীন বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে সাহাবাদের অন্তর থেকে শয়তানী কুমন্ত্রণা দূর করেছিলেন ।
এছাড়াও সূরা সোয়াদ এর ৪১নং আয়াতে দীর্ঘকালীন ব্যাধিতে আক্রান্ত নবী আইয়ুব (আ) এর দোয়ার কথা উল্লেখিত হয়েছে । তিনি দোয়া করেছিলেন—(হে আমার রব!) শয়তান আমাকে যন্ত্রনা ও কষ্টে জড়িয়েছে । (সূরা সোয়াদ ৪১)
পরবর্তী আয়াতে উক্ত দুয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ কর্তৃক তাকে শিখানো রোগমুক্তির পদ্ধতি উল্লেখিত হয়েছে ।
ইরশাদ হয়েছে— (আমি তাকে বললাম) তোমার পা দ্বারা মাটিতে আঘাত কর । নাও, এই তো ঠাণ্ডা পানি গোসলের জন্য এবং পান করার জন্য । (সূরা সোয়াদ ৪২)
এ আয়াতটি দ্বারা আমরা জানতে পেলাম, পবিত্র পানি দিয়ে গোসলের মাধ্যমে আল্লাহ রব্বুল আলামীন দীর্ঘকালীন ব্যাধিতে আক্রান্ত নবী আইয়ুব (আ) কে সুস্থতা দান করেছিলেন ।
আম্মাজান হযরত আয়শা (রা.) থেকে সুনানে আবু দাউদ এর এক বর্ণনায় এসেছে, নবীযুগে বদনজরদাতাকে অযুর নির্দেশ দেয়া হত এবং সে পানি দ্বারা নজরে আক্রান্ত ব্যক্তি গোসল করত । (সূনানে আবু দাউদ, ৩৮৮০)
তেমনিভাবে স্বয়ং রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার উদ্দেশ্যে) তোমাদেরকে (নজরদাতাকে) যদি গোসল করতে বলা হয়; তাহলে তোমরা গোসল কর । (সহীহ মুসলিম, ২১৮৮)
এ গোসলের পদ্ধতি সম্পর্কে মুসনাদে আহমাদে সাহল ইবনে হুনাইফ (রা) এর বদনজরে আক্রান্ত হওয়া সংক্রান্ত লম্বা হাদীসের শেষাংশে এভাবে উল্লেখ হয়েছে যে,
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমের ইবনে রাবীআ (রা) কে গোসলের নির্দেশ দিলে; তিনি তার চেহারা, কনুই পর্যন্ত উভয় হাত, পায়ের পার্শ্বসহ হাটু পর্যন্ত উভয় পা এবং লুঙ্গির ভিতরের অংশ (লুঙ্গির উল্টা দিক) ধৌত করে; ধৈৗতকৃত পানি একটি পাত্রে রাখলেন । অতঃপর “পিছন দিক থেকে সাহল ইবনে হুনাইফ (রা) এর মাথা এবং পিঠে” উক্ত পানি ঢেলে দিলে তিনি তৎক্ষনাত সুস্থ হয়ে গেলেন । (মুসনাদে আহমদ, ১৫৯৮০)
উপরোল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা সাধারণ অসুস্থতা ও বদনজর থেকে সুস্থতা লাভের জন্য গোসলের উপকারিতার কথা প্রতিয়মান হয় । যে কারনে উক্ত আয়াত ও হাদীসের আলোকে প্রত্যেক যুগের অভিজ্ঞ রাক্বীগণ যাদু, বদনজর ইত্যাদি যেকোনো প্যারানরমাল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরকে “রুকইয়াহ গোসল” এর পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।