সন্তান লাভের কুরআনী দোয়া

কয়েকজন নবীকে আল্লাহ পাক রব্বুল আ’লামীন দীর্ঘ একটা সময় নিঃসন্তান রেখে পরীক্ষা করেছেন । ধৈর্যের দীর্ঘ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে; লম্বা সময়ের দোয়ার মাধ্যমে তাঁরা সন্তান লাভ করেছিলেন । তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত যাকারিয়া (আ.) । তাঁর সন্তান চেয়ে দোয়ার বাক্যগুলো আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন এত বেশি পছন্দ করেছেন যে, তা কুরআনের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন ।

অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে যে, যে বাক্যের দোয়া ইতিপূর্বে কবুল হয়েছে পরবর্তীতেও হুবহু উক্ত বাক্যে দোয়া করা হলে তা কবুল হওয়ার বেশি আশা করা যায় । উপরোক্ত কারনে যাকারিয়া (আ.) এর উক্ত কবুল দোয়ার বাক্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সন্তান চেয়ে দোয়া করা হলে তা ক্ববুল হ‌ওয়ার ব্যাপারে বেশি আশা করা যায়।

কুরআনে বর্ণিত যাকারিয়া (আ.) এর উক্ত দোয়ার বাক্যগুলোর সূরার নাম ও আয়াত নম্বর উল্লেখ করে দিচ্ছি । আল্লাহ পাক যাদের নিঃসন্তান রেখে পরীক্ষা করছেন, তারা পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে উক্ত দোয়ার বাক্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ পাকের কাছে সন্তান লাভের ফরিয়াদ করতে থাকুন।‌ আল্লাহপাক কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ্।

হযরত যাকারিয়া (আ.) এর স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা, যে কারণে তাদের সন্তান-সন্ততি হচ্ছিলনা । বৃদ্ধ বয়সে এসে যাকারয়িা (আ.) আল্লাহর কাছে দুয়া করলেন-

رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ

বাংলা উচ্চারণ— রব্বি লা তাযারনি ফারদাও ওয়া আংতা খাইরুল ওয়ারিছী-ন ।

অর্থ— হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সন্তানহীন করে রেখ না, আর তুমিই শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী। (সূরা আম্বিয়া -৮৯)

এই দুয়ার প্রেক্ষিতেই আল্লাহ পাক তার দোয়া ক্ববুল ও সন্তানের সুসংবাদ বাণী প্রেরণ করলেন । ইরশাদ হয়েছে—

অর্থ- অতঃপর আমি তার (যাকারিয়া (আঃ) এর) ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম, এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া । আর তার জন্য তার স্ত্রীকে উপযোগী/সুস্থ/সংশোধন করেছিলাম । তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর আমাকে আশা ও ভীতি সহকারে ডাকত । আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী। (সূরা আম্বিয়া-৯০)

তবে দু’আ কবুলের জন্য আয়াতে উল্লেখিত গুণাবলীর প্রতি যত্ন রাখা জরুরী । যেমন—

১। আল্লাহর নিকট বিনীত হওয়া ।
২। কাকুতি-মিনতি সহকারে প্রার্থনা করা ।
৩। সৎকাজে প্রতিযোগিতা করা ।
৪। আশা ও ভীতির সাথে তাঁকে ডাকা।

এছাড়াও সূরা আলে ইমরান এর ৩৮ নং আয়াতে দোয়ার আরেকটি বাক্য বর্ণিত হয়েছে।

رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ

অর্থ— হে আমার রব! আমাকে আপনার নিকট থেকে পবিত্র বংশধর দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি দোয়া শ্রবনকারী ।

এছাড়াও সূরা মার‌ইয়ামের ৩ থেকে ৬ নম্বর আয়াতেও তাঁর দোয়া সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে ।

আমল পদ্ধতি— আয়াতগুলো পড়ার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা কিংবা বিশেষ কোনো পদ্ধতি নেই । যেকোনো সময় যেকোনো সংখ্যক বার তেলাওয়াত করে আপনি দোয়া করতে পারেন । তবে যেহেতু হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, ফরজ নামাজের পরে দোয়া কবুল হওয়ার একটি বিশেষ মুহূর্ত, সুতরাং আমার পরামর্শ থাকবে— প্রতি ফরজ নামাজের পরে অর্থের দিকে খেয়াল রেখে দোয়ার নিয়তে যত বেশি সংখ্যক বার সম্ভব নিয়মিত আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবেন ।

প্রত্যেক নিঃসন্তান দম্পতিকে আল্লাহপাক রাব্বুল আ’লামীন সন্তান দিয়ে তাদের চোখের শীতলতা দান করুন। আমীন ।

 

error: Content is protected !!