পরিস্থিতি : কেন এ আয়োজন —
প্রবাসী, কিংবা যারা অজপাড়া গাঁয়ে থাকে, অথবা যে সমস্ত জেলায় রাক্বী নেই এমন কোথাও যে রোগী বসবাস করে, তাদের জন্য ঢাকায় কিংবা বিভাগীয় শহরে এসে রুকইয়াহ করা যেমন কষ্টসাধ্য তেমনি ব্যয়বহুল । যেকারণে প্রয়োজনীয়তা বুঝা সত্ত্বেও অনেকেই চিকিৎসা নিতে পারেনা। দিনের পর দিন জ্বীন-যাদুর কষ্টে ভুগতে থাকে। কেবল তাদের কথা বিবেচনায়ই “অনলাইন রুকইয়াহ”র এ আয়োজন। যাতে এ ধরণের রোগীরা একেবারেই বিনা চিকিৎসায় না ভুগে; কমপক্ষে অনলাইনে হলেও চিকিৎসা নিতে পারেন।
অবশ্য এ কথা শতভাগ স্বীকৃত ও প্রমানিত যে, অনলাইন রুকইয়াহ’র চেয়ে সরাসরি রুকইয়াহতে উপকারিতা অনেক গুণ বেশি। এবং রুকইয়াহর ক্ষেত্রে প্রকৃত নিয়মই হচ্ছে রোগী সরাসরি রাক্বীর সামনে উপস্থিত হয়ে রুকইয়াহ করা । যে কারণে সুযোগ থাকলে অনলাইন রুকইয়াহ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। এটি কেবল নিরুপায় অবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থা।
বিভিন্ন কারণে একান্তই যখন সরাসরি রুকইয়াহ করা সম্ভব হয়না, সে সময় পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনার রাক্বী উপযুক্ত মনে করলে তখনই কেবল অনলাইন রুকইয়াহ করা যেতে পারে। সকল পরিস্থিতিতে সব ধরণের রোগীদেরকে অনলাইনে রুকইয়াহ করার সুযোগ নেই।
✓ কারা অনলাইনে রুকইয়াহ করতে পারবেনঃ
যারা একদমই বেসিক লেভেলের সমস্যায় ভুগছেন, অথবা যাদের মধ্যে জ্বীন-যাদুর স্ট্রং কোনো লক্ষণ নেই তবে সাধারণ ২/৪ টা লক্ষণ থাকায় কৌতুহল বশতঃ ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ করতে চাচ্ছেন, অথবা বাচ্চাদের বদনজরের জন্য রুকইয়াহ করতে চাচ্ছেন, অথবা ইতিপূর্বে এক বা একাধিকবার সরাসরি রুকইয়াহ করেছেন; পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন আপনার রাক্বী মনে করছেন যে, আপনাকে অনলাইনে রুকইয়াহ করার সুযোগ রয়েছে, বিবাহ বন্ধের যাদুতে আক্রান্ত কিন্তু জ্বীন আছরের তেমন কোন লক্ষণ নেই — এধরণের রোগীদের ক্ষেত্রেই কেবল অনলাইন রুকইয়াহ’র এ সুযোগ ।
মোট কথা, রাক্বীর সাথে আপনার পরিস্থিতি আলোচনা করার পরে তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন যে, আপনার পরিস্থিতি ও রোগ বিবেচনায় অনলাইনে রুকইয়াহ করা ও আপনাকে কন্ট্রোল করা সম্ভব হবে কিনা!
অনলাইন রুকইয়াহর জন্য কয়েকটি পূর্ব প্রস্তুতি—
১) ইন্টারনেট স্পিড ভালো এমন কোথাও অবস্থান করা ।
২) রোগীকে কন্ট্রোল ও সাপোর্ট দেয়ার জন্য আশপাশে কয়েকজন সাহসী ও শক্তিশালী লোক উপস্থিত থাকা।
৩) অনেক সময় সমস্যার ধরণ বুঝা যায় না। বাহ্যিকভাবে দেখতে সাধারণ থেকে সাধারণ সমস্যাগ্রস্ত রোগীরও রুকইয়াহ শুরু করার পরে ভিতরের আসল অবস্থা প্রকাশ পায়। শরীরে জ্বীন থাকলে হাজির হয়ে যায় বা যাদুর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। এহেন পরিস্থিতিতে রাক্বীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন আয়াত পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে তা রোগীর গায়ে ছিটানো বা রোগীকে পান করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
উপর্যুক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মোকাবেলায় পূর্ব সতর্কতা স্বরূপ, শুদ্ধভাবে কোরআন পড়তে পারে এমন একজন লোক এবং এক কপি কুরআন মাজীদ উপস্থিত রাখা ।
৪) যেহেতু ভিডিও কলে রুকইয়াহ করা হবে, রোগী মহিলা হলে অথবা আশপাশের সাপোর্ট দেয়ার লোক মহিলা হলে অবশ্যই পর্দার সহিত ক্যামেরার সামনে আসা ।
৫) যেহেতু অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে সাধারণত সাউন্ড কম হয়, সেকারণে সম্ভব হলে একটি ব্লুটুথ স্পিকারের ব্যবস্থা রাখা ।
৬) রোগীর অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের সুবিধার্থে সম্ভব হলে কোনো ট্রাইপড বা মোবাইল স্ট্যান্ডে মোবাইল সেট করে রাখার ব্যবস্থা করা।
অডিও রুকইয়াহ শোনার তুলনায় অনলাইন রুকইয়াহতে অতিরিক্ত উপকারিতা কী?—
১ | রুকইয়াহতে নিয়ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ । অনলাইনে রুকইয়াহ’র যে রেকর্ডগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো হয়তবা অন্য কাউকে রুকইয়াহ করা হয়েছে তার রেকর্ড, অথবা কোনো রাক্বী কমন নিয়তে তিলাওয়াত করেছেন তার রেকর্ড । অথচ অনলাইনে যখন আপনাকে রুকইয়াহ করা হচ্ছে; তখনকার তিলাওয়াত কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে আপনার নিয়তে করা, আপনার সমস্যাগুলোর কথা মাথায় রেখে সেগুলো থেকে সুস্থতার নিয়তে করা । আর সুস্থতার জন্য এ ‘নিয়ত’ অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
২ |একজন জ্বীনের আছরগ্রস্থ রোগী যখন জ্বীনের রুকইয়াহ’র রেকর্ডেড অডিও শুনবে, তার প্রতিক্রিয়া ও পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তার মোবাইলে কিন্তু পূর্ব থেকে রেকর্ডেড সেই আয়াতগুলোই প্লে হতে থাকবে । কিন্তু যখন সে সরাসরি কোনো রাক্বীর কাছে অনলাইনে রুকইয়াহ করবে, তার পরিস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া যেমন হবে, রাক্বী সাহেবও সে অনুযায়ী উপযুক্ত আয়াত ও দোয়া নির্বাচন করতে পারবেন, যেমনটা সরাসরি রুকইয়াহ’র সময় করা হয়ে থাকে। আর রোগীর পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে আয়াত ও দোয়া নির্বাচন করে রুকইয়াহ করাই রুকইয়াহ’র মূল ‘থিম’ ।