‘আল মাস্সুল ওয়াহমী’ সম্পর্কে জানানোর পূর্বে সংক্ষেপে মনোদৈহিক রোগ সম্পর্কে ধারণা দেয়া সমীচিন মনে করছি। বিস্তারিত সংজ্ঞায় না গিয়ে খুবই সংক্ষেপে যদি বলি— মনের রোগ যখন প্রকট আকার ধারণ করে দেহের উপরেও তার প্রভাব বিস্তার করে তাকেই মনোদৈহিক রোগ বলা হয় । এমনই একটি মনোদৈহিক রোগের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে—আল মাস্সুল ওয়াহমী ।
সংক্ষেপে এর সংজ্ঞা এভাবে বলা যায়— (মনস্তাত্ত্বিক কারণে) ব্যক্তির আচরণ জ্বীনের রোগীর মতো, কিন্তু মূলত তাঁর মধ্যে জ্বীনের আছর নেই । তাকেই বলে আল মাস্সুল ওয়াহমী । এটিকে ‘আল মাস্সুল হাওয়াই’-ও বলে ।
-
এটাও কি সম্ভব?
-
জ্বী, সম্ভব।
-
এমনটাও কি হয়?
-
শুধু হয়-ই না, অহরহ হয় ।
শুনে চোখ কপালে উঠলেও এটি চরম সত্য যে, এমন রোগীর সংখ্যা নেহায়েত কমও নয়। বরং আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে— দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যে সমস্ত রোগীরা এ রাক্বী থেকে সে রাক্বী, এই সেন্টার থেকে ঐ সেন্টার ঘুরাঘুরি করেও সুস্থ হচ্ছেন না— তাদের মধ্যে শক্ত যাদু ও শক্তিশালী জ্বীন দ্বারা আক্রান্ত জটিল রোগীও যেমন আছেন— তেমনি এদের মধ্যে “আল মাস্সুল ওয়াহমী” তে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও অনেক।
আল মাস্সুল ওয়াহমী কিংবা অন্যান্য মানসিক রোগ সম্পর্কে রোগী ও তাঁর রাক্বীর অজ্ঞতার কারণেই এমন রোগীরা প্রকৃত রোগ চিহ্নিত করতে না পেরে বছরের পর অসুস্থ অবস্থায় কাঁটায়। রুকইয়াহ সম্পর্কিত অসম্পূর্ণ জ্ঞান, জ্বীন-যাদু সম্পর্কিত অতিরিক্ত ভীতি ও কুসংস্কার, মানসিক ট্রমা, পরিবার বা নিকটস্থ লোকদের মধ্যে জ্বীন-যাদুর পূর্ব ইতিহাস ইত্যাদি ইত্যাদি নানা কারণেই একজন মানুষ আল মাস্সুল ওয়াহমীতে আক্রান্ত হতে পারেন।
এর কাছাকাছি আরেকটি প্রকার হচ্ছে— ‘আল মাস্সুল কাজিব’ । তথা জ্বীন আছরের মিথ্যা অভিনয় করা । বিশেষ করে মাদ্রাসার হিফজ পড়ুয়া ছোটো ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আল মাস্সুল ওয়াহমী এবং আল মাস্সুল কাজিব এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, প্রথম প্রকারের রোগীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মনস্তাত্ত্বিক কারণে জ্বীনের রোগীদের মতো আচরণ করে । আর দ্বিতীয় প্রকার তথা আল মাস্সুল কাজিব এর রোগীরা সব জেনেবুঝে সাধারণ সেন্সে ইচ্ছা করে জ্বীনের রোগীদের মতো আচরণ করে।
প্রথম প্রকার রোগীদেরকে ওয়াসওয়াসার চিকিৎসা দিতে হবে । সাথে কাউন্সেলিং। দ্বিতীয় প্রকার রোগীদেরকে অভিভাবকদের থেকে আলাদা ডেকে তার এহেন আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করতে হবে এবং তাকে কাউন্সেলিং করতে হবে।