বরই একটি জান্নাতি গাছ । জান্নাতবাসীরা এ গাছের ছায়াতলে আরাম করবে । যেমনটি পবিত্র কুরআনে সূরা ওয়াকিয়ার ২৮ নং আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে । এছাড়াও সূরা নাজমের ১৬ নং আয়াতেও এ গাছের কথা উল্লেখিত হয়েছে ।
মে’রাজ রজনীতে রসূল (স.) সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছলে, তাকে দেখার জন্য অসংখ্য ফেরেশতা সোনার প্রজাপতি আকারে সেখানে থাকা ‘সিদর’ তথা বরই গাছের উপরে একত্রিত হয়েছিল । যার পাতাগুলো ছিল হাতির কান সদৃশ্য বিশাল আকৃতির । তখনকার সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে রসূল (স.) ইরশাশ করেছেন— কোন মাখলূকের পক্ষে সে সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয় (মুসলিম ) ।
এটি বহুবিধ ঔষধি গুণ সম্পন্ন একটি গাছ । এর বহুমুখী উপকারিতার কথা বিবেচনা করে রসূলুল্লাহ (স.) কঠোর ভাষায় গাছটি কাটতে নিষেধ করেছেন (সুনানে আবু দাউদ, বায়হাকী) ।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে—
- মৃত ব্যক্তিকে ভালোভাবে পবিত্র করার জন্য রসূল (স.) গোসলের পানির সাথে বরই পাতা মিশিয়ে নিতে আদেশ করতেন (বুখারী, মুসলিম) ।
- কুফরের অপবিত্রতা ত্যাগ করে কোন ব্যক্তি নতুন মুসলামন হতে আসলেও রসূল (স.) তাকে বরই পাতার পানি দিয়ে গোসলের নির্দেশ দিতেন (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ) ।
- তেমনিভাবে হায়েজ এর রক্ত ইত্যাদি বাহ্যিক অপবিত্রতা থেকে কাপড়কে ভালোভাবে পবিত্র করার জন্যও রসূল (স.) পানির সাথে বরই পাতা মিশিয়ে তা দিয়ে ধৌত করার পরামর্শ দিতেন (নাসাঈ, দারেমী, আবু দাঊদ) ।
শরীরের জ্বর জ্বর ভাব, মাথার ত্বক পরিষ্কার, পেট খারাপ, বদহজম ও ক্ষুদামন্দা দূর হওয়া, খাবার রুচি ফিরে আসা, এবং যাদু নষ্ট হওয়া; বিশেষতঃ পেটের যাদু ও নপুংসক বানানোর যাদু নষ্টে এ গাছের পাতার মধ্যে আল্লাহ পাক অনেক কার্যকিারিতা রেখেছেন ।
আরব-অনারব সকল দেশের রাকীগণই যুগ যুগ ধরে রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে বরই, বরই পাতা, বরই ফুলের মধু ইত্যাদি ব্যবহার করে আসছেন । যা মুলত, বিখ্যাত তাবিয়ী ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রহ.) থেকে গ্রহণ করা হয়েছে ।
এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে ইবনে হাজার হাইতামী (রহ.) বিখ্যাত মালিকী ফকীহ ইবনে বাত্তাল (রহ.) এর সূত্রে ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে,
সবুজ সাতটি বরই পাতা নিয়ে দুই পাথরের মাঝে (শিল-পাটায়) পিষে তা পানির সাথে মিশিয়ে নিবে । এবং তাতে আয়াতুল কুরসি ও চাঁর কুল তথা সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিবে । অতঃপর সেখান থেকে তিন কোষ পানি পান করবে ও অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করবে (আজ জাওয়াজির ফি ইকতিরাফিল কাবাঈর) ।
ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ও তার জগদ্বিখ্যাত বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারিতেও এমনটা উল্লেখ করেছেন (খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা : ২৩৩) ।
বিন বায (রহ.) বলেন— যাদু নষ্টে এ পদ্ধতির চিকিৎসায় অসংখ্য মানুষ-ই উপকৃত হয়েছে (মাজমুয়া ফাতওয়া বিন বায, ৩/২৭৯) ।
আমাদের পরামর্শঃ সাতটি সবুজ বরই পাতা পিষে পানির সাথে মিশিয়ে সম্ভব হলে তিনবার করে অথবা একবার করে নিম্নোক্ত সূরা ও আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে তাতে তিনবার ফুঁ দিবে । পানিতে কব্জি পর্যন্ত হাত ভিজিয়ে রেখে পড়তে পারলে বেশি ভালো ।
- দরুদ শরীফ
- আয়াতুল কুরসি
- চাঁর কুল (সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস)
- সূরা আ’রাফ ১১৭ থেকে ১২২ নং আয়াত
- সূরা ইউনুস ৮১ ও ৮২ নং আয়াত
- সূরা ত্বহা ৬৯ নং আয়াত
- দরুদ শরীফ
অতঃপর, বিসমিল্লাহ বলে সেখান থেকে ডান হাতের তালুতে নিয়ে তিন কোষ পানি পান করবে, তিনবার নাকে পানি দিবে এবং অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করবে । পানি পান করার উপযোগী না হলে পান করার পরিবর্তে তিনবার কুলি করে নিবে ।
গোসলের ক্ষেত্রে প্রথমে মাথার পিছনভাগে পানি ঢালবে, অতঃপর শরীরের বাকি অংশে পানি ঢালবে । শরীরের চুল পরিমান জায়গাও ফাকা না থাকে এভাবে পানি ঢালবে ও গোসল করবে । অন্তত সাতদিন অথবা নিজ নিজ রাক্বীর পরামর্শ অনুযায়ী দিন নির্ধারণ করে গোসল করবে ।
পেটের যাদু নষ্ট করার জন্য— উল্লেখিত নিয়মে বরই পাতার পানি তৈরি করে কিছুক্ষণ রেখে দিবে । যাতে পানির সাথে থাকা বরই পাতার অংশগুলো পাত্রের নিচের দিকে চলে যায়, অতঃপর পানির ছাকনি দিয়ে কয়েকবার ভালোভাবে ছেকে, সকালে খালি পেটে যাদু নষ্টের নিয়তে সে পানি পান করবে ।
অথবা, সাতটি বরই পাতা পানির মধ্যে দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় জ্বাল দিবে । ১০/১৫ মিনিট জ্বাল দেয়ার পরে পাতাগুলো যখন ধূসর রঙের হয়ে যাবে এবং পানি লাল রং ধারণ করবে, তখন চুলা থেকে নামিয়ে খাবার উপযুক্ত ঠান্ডা করে ছেকে নিবে । এরপরে উপরোক্ত আয়াতগুলো পড়ে উক্ত পানিতে ফুঁ দিয়ে সকালে খালি পেটে যাদু নষ্টের নিয়তে তা পান করবে ।
পেটের যাদু নষ্ট করার জন্য উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে সকালে খালিপেটে ও রাতে ঘুমের পূর্বে ১/২ চামচ বরই ফুলের মধু পান করাও বেশ উপকারি হবে—ইনশাআল্লাহ্ ।