রুকইয়াহ অডিও>ডিজিটাল যুগের তাবিজ

কুরআন তিলাওয়াত করতে জানা সত্ত্বেও জ্বীন-যাদূর চিকিৎসায় কেবলমাত্র রুকইয়াহ’র অডিওর উপরে ডিপেণ্ড করা, আর তিলাওয়াত না করে কুরআনের আয়াত লিখে তাবিজ বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখা একই কথা । দু’য়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই । একটা আদি ভার্সন আরেকটি ডিজিটাল ।


অপারগতার ক্ষেত্রে দুইটাই বৈধ, তবে কোনটাই মূল চিকিৎসা উপকরণ নয়; বরং বিকল্প ব্যবস্থা । যে কারনে কুরআনের ভাব-মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকায় পারতপক্ষে উভয়টাই নিরুৎসাহিত করা হয় ।

ফোরজি’র এ যুগে বার্গার বানাতে না জানলে ইউটিউব দেখে শেখা সম্ভব, বাংলা মাধ্যমে পড়েও কোর্স করে স্পোকেন ইংলিশে পণ্ডিত হওয়া সম্ভব, অনলাইন ঘাটাঘাটি করে এসইও, ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, ওয়েব ডিজাইনিং, কোডিংসহ জটিল ও কঠিন সব কিছু শেখাই সম্ভব, অজানা অনেক কিছু-ই জানা সম্ভব, পূর্বে দক্ষতা ছিলোনা এমন অনেক বিষয়-ই দক্ষতা অর্জন সম্ভব, তবে কুরআনের চ্যাপ্টার আসলেই – ”আমি তো কুরআন পড়তে পারিনা”!


কুরআনের বেলায় এসে আর ইউটিউব, অনলাইন কোর্স, গৃহ শিক্ষকের মাধ্যমে শেখার সুযোগ হয়না । আর সব কিছুর বেলায় হয় । অথচ আল্লাহ কুরআনকে মানুষের জন্য সহজ করে অবতীর্ণ করেছেন । যেমনটি তিনি সূরা ক্বমার (৫৪) এর ২২ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন ।

যেকোনো বয়সী মানুষ, যেকোনো পেশার মানুষ, দুনিয়াবী শিক্ষায় শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যেমনই হোক না কেন, অদম্য ইচ্ছা এবং পর্যাপ্ত চেষ্টার সাথে দক্ষ শিক্ষকের কাছে ২/৩ মাস পড়লেই কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করা সম্ভব । অভাব শুধু প্রয়োজনীয়তার অনুভব আর একটুখানি ইচ্ছা শক্তি ।

এমনও রোগী আছে যারা ২/৩ বছর যাবত জ্বীন-যাদূতে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও “পড়তে জানিনা” এই লেইম অযূহাতে শুধু ‍রুকইয়াহ অডিও শোনার উপরে ডিপেন্ড করে আছেন । এবং দীর্ঘদিন যাবত নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন । অথচ চাইলে-ই কুরআনটা শিখে নিতে পারতো, কমপক্ষে নিজ চিকিৎসার স্বার্থে হলেও শিখে নিতে পারতো, এবং মোবাইলে অডিও শোনার পরিবর্তে সরাসরি তিলাওয়াতে আল্লাহ চাইলে আরোগ্যতাও দ্রুত আসত!!

অডিওর উপরে ডিপেন্ড করতে এবং কুরআন লিখে তাবিজ আকারে ঝুলিয়ে রাখতে যে কারনে নিরুৎসাহিত করা হয় –

এক. বেশিরভাগ রোগী-ই মোবাইলে রুকইয়াহ তিলাওয়াত প্লে করে মনযোগ দিয়ে শ্রবণ না করে নিজ নিজ কাজ-কর্মে লিপ্ত থাকেন । অনেক সময় আশপাশের মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন । অথচ কুরআন পাঠ করা হলে চুপ করে একাগ্রতার সাথে তা শোনা ওয়াজিব ।

আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
وَإِذَا قُرِىءَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা তা শোন এবং চুপ থাক, যেন তোমাদের উপর করুণা করা হয়। (সূরা আ’রাফ ২০৪)

নির্দেশটি সরাসরি তিলাওয়াতের ন্যায় মোবাইলে তিলাওয়াতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ।

দুই. তেমনিভাবে কুরআন লিখে তাবিজ আকারে শরীরে লটকিয়ে রাখলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কুরআনের সাথে বে-আদবির সুযোগ তৈরি হয় । যেমনঃ টয়লেটে প্রবেশের সময়, মহিলাদের অপিত্রতার সময় ইত্যাদি । সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে – কুরআনি তাবিজের নামে ভণ্ড কবিরাজ এবং অসচেতন ও অজ্ঞ, নামধারী হুযূরদের কাছ থেকে নকশা, ইলুমিনাতি ও তন্ত্র-মন্ত্রের শিরকী তাবিজের ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি হয় ।

অতএব, যে সমস্ত রোগীরা কুরআন পড়তে পারেননা, প্রথমতঃ তাদের জন্য অবশ্য করণীয় হচ্ছে যতদ্রুত সম্ভব কুরআন তিলাওয়াত শিখে নেয়া । দ্বিতীয়তঃ কুরআন শিখা সমাপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এবং মহিলাদের হায়েয-নেফাসের অপিত্রতা বা অন্য কোন বিশেষ ওজর দেখা দিলে বিকল্প হিসেবে সাময়িকের জন্য রুকইয়াহ অডিও শোনা ।

অলসতা বশতঃ বর্তমান রোগীরা চিকিৎসার দ্বিতীয় স্তরের উপকরণকে প্রধান উপকরণ হিসেবে গ্রহণ করায় তাদের সুস্থতাও বিলম্বিত হচ্ছে ।

আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক জ্ঞান দান করুন ।

error: Content is protected !!