কীভাবে বুঝবো আমার জ্বীন-যাদু বিষয়ক কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা— এটি আমাদের কাছে সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত একটি প্রশ্ন । এর উত্তরে যখন আমরা বলি— লক্ষণ মিলিয়ে এবং ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ করে; স্বভাবতই তখন নতুন প্রশ্ন তৈরি হয়—কী কী লক্ষণ মিলিয়ে বুঝতে হয় এবং ‘ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ’ টা আবার কী? এবং কীভাবে করতে হয়? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়েই বক্ষমান এই লেখাটি । আশাকরি এতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন—ইনশাআল্লাহ্ ।
লক্ষণ মিলিয়ে কীভাবে আপনার সমস্যা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিবেন সে সম্পর্কিত বিস্তারিত লেখা ইতিপূর্বেই প্রকাশ করা হয়েছে । যারা পড়নেনি নিচের লিংক থেকে পড়ে নিতে পারেন ।
লিংক— https://muftialamin.com/find-out-your-paranormal-disease-with-symptoms/
আজকের লেখায় শুধু ‘ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ’ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে— ইনশাআল্লাহ্ । ওয়া মা তাওফীকি ইল্লা বিল্লাহ্ । আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইহি উনীবু ।
ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ কী? এটি বুঝার জন্য প্রথমে জানা প্রয়োজন “রুকইয়াহ” কী?
সংক্ষেপে এর উত্তর হচ্ছে— নিজের বা অন্যের সুস্থতা অথবা বিশেষ কোনো লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ’র সাহায্য পাওয়ার আশায়— কুরআনের আয়াত, হাদীসে বর্ণিত দোয়া, আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বাবাচক বা গুণবাচক কোন নাম অথবা বৈধ অর্থবোধক কোন বাক্য পাঠ করে আক্রান্ত ব্যক্তি বা বস্তুকে ঝাড়ফুঁক করা ।
এ সম্পর্কিত আরো বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকটি ফলো করুন— https://muftialamin.com/what-is-ruqyah/
“ডায়াগনোসিস” বহুল ব্যবহৃত একটি ইংলিশ শব্দ । যার অর্থ সবারই জানা— রোগ নির্ণয় । সুতরাং “ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ” এর অর্থ দাঁড়ালো — যে রুকইয়াহ করে রোগ নির্ণয় করা হয় । আরেকটু বিস্তারিত বললে— আপনি জ্বীন, যাদু ও বদনজর ইত্যাদি কোন প্যারানরমাল সমস্যায় আক্রান্ত কিনা, আক্রান্ত হয়ে থাকলে সেটি কী? জ্বীন, যাদু নাকি বদনজর— এটি নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে যে রুকইয়াহটি করা হয় তাকে বলা হয়— ‘ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ’ ।
যেভাবে ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ করা হয়— আপনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন যে, রুকইয়াহ এর পুরো প্রসেসটিই কুরআন তিলাওয়াত নির্ভর । সুতরাং ডায়াগনোসিস রুকইয়াহতেও সেই একই কাজ— কুরআন তিলাওয়াতই করা হয় । ব্যতিক্রম এতটুকু যে, পুরো কুরআন বা অনির্ধারিতভাবে কুরআনের যেকোন জায়গা থেকে তিলাওয়াত না করে; জ্বীন, যাদু, হিংসা ও বদনজর সম্পর্কিত বিশেষ বিশেষ কিছু সূরা ও আয়াত পড়া হয় । পাশাপাশি হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আরবী কিংবা বাংলায় রাক্বীর পক্ষ থেকে যাদু নষ্ট কিংবা জ্বীনকে আযাব দেয়ার নিজস্ব কিছু দোয়াও পড়া হয় ।
যেভাবে রোগ নির্ণয় হয়— আপনি জেনে থাকবেন যে, প্যারানরমাল সমস্যার মূল ক্যাটাগরি হচ্ছে তিনটি— জ্বীন, যাদু ও হিংসা বা বদনজর । আর কুরআন পাকে আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন— জ্বীন,যাদু, হিংসা, বদনজর ইত্যাদি সব বিষয়ক আয়াতই নাযিল করেছেন । একজন পেশেন্ট যখন ডায়াগেনোসিস রুকইয়াহ করতে আসেন; তাকে এই সকল ক্যাটাগরি থেকেই বাছাইকৃত কিছু আয়াত তিলাওয়াত করা হয় এবং তিলাওয়াত শেষে মাঝেমধ্যে ফুঁ দেয়া হয় । এতে আক্রান্ত পেশেন্ট এর মধ্যে শারীরিক বা মানসিক abnormality প্রকাশ পায় । যে রোগী যে সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত— তাকে দীর্ঘক্ষণ যাবত সে সংক্রান্ত আয়াত তিলাওয়াত করে শোনানো হলে তার মধ্যে abnormality বা অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পাবে ।
উদাহরণস্বরূপ— কোন পেশেন্ট এর মধ্যে যাদুর সমস্যা থাকলে তাকে দীর্ঘক্ষণ যাবত যাদু সম্পর্কিত আয়াত তিলাওয়াত করে শোনানো হলে এবং তার শরীরে ফুৃঁ দেয়া হলে তার মধ্যে কোন না কোন abnormality বা অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পাবে । জ্বীন দ্বারা আক্রান্ত রোগীকে জ্বীন সম্পর্কিত আয়াত শোনানোর পরে জ্বীন হাজির হবে বা শারীরিক-মানসিক কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পাবে । তেমনিভাবে বদনজরে আক্রান্ত হয়ে থাকলে সে সম্পর্কিত তিলাওয়াত শুনলে তার মধ্যে খারাপ লাগা কাজ করবে ।
যে সব সমস্যা প্রকাশ পেতে পারে— জ্বীনের সমস্যা থাকলে জ্বীন শরীরে হাজির হয়ে যেতে পারে । রোগী বেহুশ হয়ে যেতে পারে । জ্বীন দূর থেকে নজর দিলে রুকইয়াহ চলাকালীন সময় পিছনে কেহ আছে বা কেহ তাকিয়ে আছে এমনটা অনুভূত হতে পারে । অথবা কারো কারো ক্ষেত্রে তন্দ্রা এসে চোখের সামনে লাল চোখ ইত্যাদিও ভেসে উঠতে পারে ।
যাদুর সমস্যা থাকলে— শরীর প্রচণ্ড গরম বা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে, হাত-পায়ের তালুতে জ্বালা-পোড়া অনুভূত হতে পারে, শরীর বা হাত-পা সাময়িক অবশ লাগতে পারে । শরীরে সুই ফুটানো বা পিন ঢুকানোর অনুভূতি হতে পারে । নিজের কন্ট্রোলের বাহিরে হাসি-কান্না আসতে পারে । বমি কিংবা বমির ভাব হতে পারে । মাত্রাতিরিক্ত মাথাব্যথা হতে পারে । পুরো শরীর ব্যাথা কিংবা দূর্বল লাগতে পারে ।
বদনজরের সমস্যা থাকলে— প্রচণ্ড ঘুম কিংবা বারবার হাই আসতে পারে ।
তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । সমস্যাগুলো সাময়িক । কিছুক্ষণ পরেই চলে যাবে—ইনশাআল্লাহ্ । রোগ ও রোগীভেদে সমস্যা প্রকাশের ধরণ ভিন্নও হতে পারে । এজন্য আপনাকে একজন অভিজ্ঞ রাক্বীর শরনাপন্ন হতে হবে । তিঁনি তার জ্ঞান, বিচক্ষণতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে আপনাকে সঠিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন—ইনশাআল্লাহ্ ।