কোনো কোনো যাদুগ্রস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অনেক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, তার চালচলন, কথাবার্তা, আচার-আচরণে পরিবার বা শুভাকাঙ্খীগণ তার যাদুতে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটি স্পস্ট বুঝতে পারলেও (যাদুর প্রভাবে প্রভাবিত থাকার কারণে) সে নিজে কোনোভাবেই তা মানতে চায় না। বা সে এসব প্যারানরমাল বিষয়গুলো সে বিশ্বাসই করে না। যে কারণে উক্ত যাদুগ্রস্থ ব্যক্তিকে সরাসরি রুকইয়াহ করা বা তাকে দিয়ে যাদু নষ্টের কোন আমল করানো সম্ভব হয় না । এ ধরণের পরিস্থিতে উক্ত ব্যক্তির যাদু নষ্টের জন্য নিম্নোক্ত পরামর্শসমূহ ফলো করতে পারেন ।
১। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভিক্টিমের যাদু নষ্টের জন্য আল্লাহ পাকের কাছে খাস দিলে দোয়া করা । যদিও ভিক্টিম (যাদুগ্রস্থ ব্যক্তি) নিজে দোয়া করা অধিক উপকারি ও দ্রুত কার্যকরি, কিন্তু যেহেতু তাকে দিয়ে দোয়া, তিলাওয়াত বা আমল করানো যাচ্ছেনা, তার হয়ে অন্য কেহ দোয়া করলেও পরম করুনাময় আল্লাহ ক্ববুল করবেন—ইনশাআল্লাহ্ ।
২। ভিক্টিমের যাদু নষ্টের নিয়তে তার হয়ে অন্য কেহ যাদু নষ্টের আয়াত তিলাওয়াত করা । একান্তই তিলাওয়াত করার মতো কোন লোক না থাকলে সেক্ষেত্রে (দূর্বল বিকল্প হিসেবে) কমপক্ষে তার হয়ে কেহ একজন যাদু নষ্টের আয়াতের রেকর্ডকৃত তিলাওয়াত (অডিও রুকইয়াহ) শোনা ।
> যাদু নষ্টের আয়াতসমূহঃ (প্রত্যেকটি তিনবার করে পড়তে হবে)
- ১) সূরা বাকারা— ১০২নং আয়াত
- ২) সূরা আ’রাফ— ১১৭ থেকে ১২২নং আয়াত
- ৩) সূরা ইউনুস— ৮১ ও ৮২নং আয়াত
- ৪) সূরা ত্বহা— ৬৯নং আয়াত
- ৫) সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস
আমলটি যত বেশি সংখ্যক বার করা যাবে তত বেশি ভালো । সম্ভব হলে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে একবার করার চেষ্টা করবেন, নতুবা ফজর ও মাগরিবের পরে করার চেষ্টা করবেন, একান্তই তাও সম্ভব না হলে দিনরাতের যেকোন সময় একবার করার চেষ্টা করবেন ।
ভিক্টিম কাছে থাকলে (সম্ভব হলে) দোয়া ও যাদু নষ্টের আয়াত তিলাওয়াতের পাশাপাশি নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলোও ফলো করতে পারলে আরো বেশি ও দ্রুত ফায়দা পাওয়ার আশা করা যায়—ইনশাআল্লাহ্ ।
৩। যাদুগ্রস্থ ব্যক্তি কাছাকাছি থাকলে এবং তাকে খাওয়ানো বা পান করানো সম্ভব হলে উপরোল্লেখিত যাদু নষ্টের আয়াত তিলাওয়াত করে যাদুগ্রস্থ ব্যক্তির খাবার ও পানীয়তে ফুঁ দিয়ে রাখা । সেক্ষেত্রে চাইলে বাসার কমন কলসি বা পানির ফিল্টারেও ফুঁ দিয়ে রাখা যাবে, এবং সেখান থেকে বাসার অন্যান্য সদস্যগণ পান করলেও কোন সমস্যা নেই । আরো সুযোগ থাকলে তার গোসলের পানিতেও ফুঁ দিয়ে রাখা । পাশাপাশি সম্ভব হলে মধু, কালোজিরার তেল, অলিভ অয়েল বা শরীরে ব্যবহারের তেল ইত্যাদিতেও ফুঁ দিয়ে রাখবেন ।
৪। নিজে তিলাওয়াত করার বাহানায় তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে উচ্চ আওয়াজে যাদু নষ্টের আয়াত তিলাওয়াত করুন আর তার যাদু নষ্টের নিয়ত করুন ।
৫। তিলাওয়াত করা সম্ভব না হলে নিজে শোনার বাহানায় তার কানে যেন স্পস্ট আওয়াজ পৌঁছে কমপক্ষে এতটুকু আওয়াজে মোবাইলে বা সাউন্ডবক্সে যাদু নষ্টের আয়াত প্লে করে রাখুন ।
৬। ঘুমন্ত অবস্থায়, কোলাকুলি অবস্থায় অথবা যেকোন সময় যদি সম্ভব হয় যাদু নষ্টের আয়াত পড়ে তার শরীরে ফুঁ দিন ।
উপরোল্লিখত পরামর্শসমূহের যে কয়টি সম্ভব, যত বেশি সময় ও যত বেশি সংখ্যক বার সম্ভব আমল করার চেষ্টা করুন । আল্লাহ ক্ববুল করলে যাদু নষ্ট হয়ে যাবে—ইনশাআল্লাহ্। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দোয়া, আর কোনোটি সম্ভব হোক বা না হোক, এটা তো সবার জন্য ও সর্বাবস্থায়ই সম্ভব । অতএব, আল্লাহ পাকের উপর পূর্ণ ভরসা ও বিশ্বাসের সাথে যাদু নষ্টের জন্য দোয়া করতে থাকুন ।