আপনি বারবার রুকইয়াহ করে যাদু নষ্ট করছেন আর এদিকে যাদুকরও বারবার যাদু করেই যাচ্ছে, কোনভাবেই যাদুর বেষ্টনি থেকে বের হতে পারছেননা, যাদু বারবার রিনিউ করা হচ্ছে, পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে, এমতাবস্থায় শেষ অ/স্ত্র হিসেবে কার্সের আমল করতে পারেন ।
কার্স শব্দের অর্থ অভিশাপ । কার্সের রুকইয়াহ অর্থাৎ যেখানে যাদুকর ও তার সহযোগীদের অভিশাপ দেয়া হয় । অভিশাপ অর্থ— আল্লাহ পাকের রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার দোয়া করা ।
কাউকে এভাবে অভিশাপ দেয়া জায়েয হবে কিনা প্রসঙ্গক্রমে এখানে এই মাসয়ালাটিও পরিষ্কার করা দরকার মনে করছি । যদিও বিষয়টি বিস্তর আলোচনার দাবী রাখে, তবুও মূল কথাটি সংক্ষেপে তুলে ধরছি ।
অভিশাপের মাসয়ালাটি সহজে বুঝার জন্য আমরা একে কয়েক ভাগে ভাগ করতে পারি ।
১। কোন মুসলামনকে অভিশাপ দেয়া ।
হুকুম— এটি পরিষ্কার নাজায়েয এবং মারাত্মক কবীরাহ গুনাহ ।
২। কুরআন বা হাদীসে যাদের সম্পর্কে নাম উল্লেখপূর্বক অভিশাপ বর্ণিত হয়েছে এমন কোন কাফেরকে নাম উল্লেখ করে অভিশাপ দেয়া।
হুকুম— নিঃসন্দেহে জায়েয।
৩। কুরআন বা হাদীসে যাদের নামে অভিশাপ বর্ণিত হয়নি এমন কোন কাফেরকে তার জীবদ্দশায় নাম উল্লেখ করে অভিশাপ দেয়া। যেমন আল্লাহ! ফুলানা কাফের এর উপর অভিশাপ নাজিল করুন ।
হুকুম— অভিশাপ অর্থ যেহেতু রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার দোয়া করা, সেহেতু হেদায়েত এর আশা রেখে নির্দিষ্ট কোন কাফেরকেও তার নাম উল্লেখ করে অভিশাপ দেয়া যাবে না । বলা তো যায় না! তার কপালেও আল্লাহ পাক ভবিষ্যতে হেদায়েত রাখতে পারেন । অবশ্য তার কুফরীর উপরে মৃত্যু নিশ্চিত হলে মৃত্যুর পরে অভিশাপ দেয়া যাবে ।
৪। নির্দিষ্ট কারো নাম উল্লেখ না করে ব্যাপকভাবে কাফেরদের প্রতি অভিশাপ দেয়া । যেমন— আল্লাহ! কাফেরদের উপর অভিশাপ নাজিল করুন । অগ্নি পূজারীদের উপর অভিশাপ নাজিল করুন । মুশরিকদের উপর অভিশাপ নাজিল করুন । যাদুকরদের উপর অভিশাপ নাজিল করুন । এভাবে বলা।
হুকুম— এটি জায়েয।
৫। যাদুকরদের অভিশাপ দেয়া।
হুকুম— হাদীসের ভাষ্যমতে যেহেতু যাদু করা কুফরী । আর যাদুর সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্টরা কাফের । সুতরাং নির্দিষ্ট কারো নাম উল্লেখ না করে ব্যাপকভাবে যাদুকরের প্রতি অভিশাপ দেয়া জায়েয । এভাবে— হে আল্লাহ! যে আমার উপরে যে যাদু করেছে, যে কবিরাজ বা যাদুকর যাদুর কাজে সাহায্য করেছে, যে জ্বীন যাদুর খাদিম হিসেবে কাজ করছে, এদের সকলের উপরে আপনি অভিশাপ নাজিল করুন ।
যাদুর খাদিম জ্বীন-শয়ত্বান যতই আল্লাহর অবাধ্যতা প্রদর্শন করুক, কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে আল্লাহকে গালাগালিও করে বসে, তথাপিও এরা ‘অভিশাপ’ দেয়াকে মারাত্মক রকমের ভয় পায় । ডজন ডজন রোগীর ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে যে, যখন অভিশাপ দেয়া শুরু করেছি, তখন গড়গড় করে জ্বীন সবকিছু স্বীকার করে নিয়েছে ।
দৃষ্টি আকর্ষণ— জ্বীনেরাও আল্লাহ পাকের সৃষ্ট মাখলুক । তাদের মধ্যেও জান্নাতী হবে । মানুষের পরে তারাই দুনিয়াতে বসবাসকারী শ্রেষ্ঠ মাখলুক । মানুষের অপরাধের বিচার করার জন্য যেমন শরীয়তের বিচারিক আইনি নীতিমালা মেনে সে অনুযায়ী বিচার করতে হয়, জ্বীনদের বেলায়ও সেইম । যতটুকু অপরাধ ততটুকু শাস্তি । অপরাধের মাত্রার চেয়ে শাস্তির মাত্রা বেশি হওয়া মানুষের বেলায়ও যেমন জুলুম, জ্বীনদের বেলায়ও একই মানের জুলুম । সুতরাং যেকোন শাস্তি প্রয়োগের পূর্বে অপরাধীর অপরাধের মাত্রার সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে ।
কাউকে জ্বীন আছর করলে আমাদের আকাবির ও আসলাফদের কর্মপদ্ধতি ছিলো, তাকে নসীহা করা, তাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া । বুঝানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করার পরেও সে বুঝতে না চাইলে বা রোগীকে না ছাড়লে তখন তাকে শাস্তির ব্যাবস্থা করা ।
যাদুর খাদিম জ্বীনের গাত্রদাহ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য কার্সের রুকইয়াহ করার পূর্বে নিজ কানে শুনতে পান মতো আওয়াজ করে নিম্নোক্ত নিয়তটি কয়েকবার উচ্চারণ করে নিতে পারেন ।
নিয়ত— হে আল্লাহ! পবিত্র কুরআনে আপনি বলেছেন— কাফেররা আপনার শত্রু। এবং যারা কুফরী করে তাদের প্রতি আপনার অভিশাপ বর্ষিত হয় ।
আপনার প্রিয় বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— যারা যাদু করে তারা কাফের।
সুতরাং হে আল্লাহ! যারা আমার উপরে যাদু করেছে, যারা উক্ত যাদুতে সাহায্য করেছে, যে সমস্ত জ্বীন উক্ত যাদু কার্যকরের কাজে খাদিম হিসেবে নিয়োজিত আছে— এদের প্রত্যেকের প্রতি আপনি অভিশাপ নাযিল করেন, এদেরকে আপনি ধ্বংস করুন । (এভাবে নিজের ভাষায় নিজের মনে কথাগুলো আল্লাহকে বলবেন)
> রুকইয়াহ লিংক : https://muftialamin.com/curse-against-magician/