আশিক জ্বীনঃ সংক্ষেপে ধারণা ও লক্ষণ

আশিক শব্দের অর্থ লাভার বা প্রেমিক । ভিক্টিমকে ভালোলাগার ফলে যে জ্বীন তাকে আছর করে তাকে আশিক জ্বীন বলে । এই ভালোলাগা শুরু থেকেও যেমন হতে পারে, আবার প্রথমদিকে যাদু বা অন্য কোন কারনে ভিক্টিমকে আছর করার পরে, দীর্ঘদিন তার সাথে থাকতে গিয়ে একটা সময় তার প্রেমিকে পরিণত হতে পারে ।

এই জ্বীনের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে এরা ভিক্টিমের সাথে লাইলী-মজনু টাইপ সম্পর্ক স্থাপনের কারনে খুব সহজে যেতে চায়না । ভালবাসার খাতিরে অনেক শাস্তি সহ্য করেও অনেক সময় যেতে চায়না। অবশ্য আল্লাহর কুরআনের সামনে টিকে থাকার মত সামর্থ্য কোন জ্বীনেরই নেই । নিয়মিত রুকইয়াহ চালিয়ে গেলে একটা সময় অবশ্যই ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়—বি-ইজনিল্লাহ্ ।

ভিক্টিম অবিবাহিতা হলে এই জ্বীনগুলো তার বিবাহে বাধা সৃষ্টি করে । বিবাহিত হলে এ ধরণের জ্বীন যেকোন উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা করে । সন্তানাদি হলে তার পিছনে সময় ব্যয় হবে বিধায়; ভিক্টিমকে বেশিক্ষণ একাকী পাওয়ার জন্য সন্তানাদি হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে ।

আরো ভয়ংকর দিক হচ্ছে— এদের মধ্যে খবীস প্রকৃতিরগুলো ভিক্টিমকে আপত্তিকরভাবে ব্যবহার করে । তাদের সাথে শারীরিক রিলেশনে জড়িয়ে পড়ে । এই পর্যায়ে চলে গেলে ভিক্টিম শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় । খবীস জ্বীনদের উপরে আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হোক । সকল মা-বোনদেরকে আল্লাহ মানুষ এবং জ্বীন খবীস থেকে রক্ষা করুন ।

দৃষ্টি আকর্ষণঃ আশিক জ্বীন মানেই যে ভিক্টিমের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় বিষয়টা মোটেই এরকম নয় । কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে এমনটা হয়, আবার কারো ক্ষেত্রে হয় না ।

আশিক জ্বীনের লক্ষণঃ

আশিক জ্বীনে আছর করলে সাধারণত ভিক্টিমের মাঝে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়—

১) বার বার স্বপ্ন দোষ হওয়া।

২) পুরুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গ থেকে অতিরক্তি পরিমানে যৌন উত্তেজক পদার্থ (মজি) নির্গত হওয়া।

৩) অতিরিক্ত যৌন উত্তেজনা অনুভব করা। বিশষ করে বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার পরে এমনটা হওয়া ।

৪) স্বপ্নে বা বাস্তবে কেউ শারীরিক লাঞ্চিত করেছে এমনটা অনুভব করা। 

৫) স্বপ্নে, তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় কিংবা বাস্তবে কেউ শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে হাত দিচ্ছে বা খারাপ কিছু (শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদি) করার চেষ্টা করছে এমনটা অনুভব করা।

৬) ঘুম থেকে ওঠার পরে আপনার সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে এমনটা অনুভব হওয়া । যেমন শরীর ব্যাথা, বিশেষ করে লজ্জাস্থানে ব্যাথা করা, ফুলে যাওয়া, স্পট দেখা যাওয়া ইত্যাদি।

৭) প্রায়ই শরীরে আঁচড় বা খামচির দাগ পাওয়া।

৮) মাঝে মাঝেই শরীর বা শরীরের কোন অংশবিশেষ সাময়িক অবশ হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে গেলে এমনটা হওয়া ।

৯) হটাৎ ইন্ট্রোভার্ট হয়ে যাওয়া। নির্জনে থাকতে ভালো লাগে। কেউ কেউ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে থাকে এইসময়ে। এক্ষেত্রে অনেক রোগীর অকারণে কান্না পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে।

১০) বিপরীত লিঙ্গের প্রতি হটাৎ অস্বাভাবিক আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া।

১১) যৌন সমস্যা দেখা দেওয়া। যেমন— বার বার প্রসাবের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া, কারণ ছাড়াই মেয়েদের বার বার সিস্ট হওয়া, অতিরিক্ত সাদা স্রাব হওয়া, নিম্নাঙ্গে বার বার ঘা বা এলার্জী জাতীয় কিছু ওঠা ইত্যাদি ।

১২) অকারণে প্রায়ই আনমনে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকা।

১৩) অকারণে হুটহাট কান্না পাওয়া।

১৪) স্বাভাবিকতার বাহিরে অতিরিক্ত পিরিয়ড হওয়া। বার বার পিরিয়ড হওয়া। অথবা দীর্ঘদিন পর পর পিরিয়ড হওয়া।

১৫) রোগ না থাকা সত্ত্বেও হুট করে শরীর অস্বাভাবিক শুকিয়ে যাওয়া।

১৬) ডাক্তারী রিপোর্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেও সন্তান না হওয়া।

১৭) বিবাহ আটকে থাকা। কোন কারণ ছাড়াই বিয়ে ভেঙে যাওয়া । বিয়ের ক্ষেত্রে নানা ঝামেলা লেগে থাকে। অকারণে বিয়ের প্রতি বিরক্তি, অনাগ্রহ ও ঘৃণা তৈরি হওয়া । বিয়ের কথা শুনলেই ভিতর থেকে কান্না আসে ইত্যাদি।

১৮) প্রায় বোবা ধরা— ঘুমের মাঝে কেহ চেপে ধরেছে এমনটা অনুভব হওয়া, নড়াচড়া করতে না পারা।

১৯) প্রায় স্বপ্নে নিজের বা অন্যের বিয়ে দেখা।

২০) স্বপ্নে প্রায়ই নিজের বা অন্য কারো বাচ্চা হতে দেখা ।

২১) প্রায়শই মাথায় অশ্লীল চিন্তা-ভাবনা ঘোরাঘুরি করা, যা চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

২২) অচেনা কেহ প্রেম বা শারীরিক সম্পর্কের আহ্বান করছে এমনটা দেখা ।

২৩) হটাৎ হটাৎ সমকামিতা অনুভব করা।

error: Content is protected !!