কেস স্টাডি : খারাপ ভিডিওতে আসক্ত একজন দ্বীনদার যুবক

রোগী একজন দ্বীনদার যুবক । সমাজের শ্রদ্ধা ও সম্মানের একটি পেশার সাথে জড়িত । কয়েকবছর আগে হঠাৎ তার চারিত্রক অবক্ষয় দেখা দিল । দ্বীনদার ও আমলি মানুষ হওয়া সত্ত্বেও সে খারাপ ভিডিও এবং মাস্টারবেশনে আক্রান্ত হয়ে পড়লো । কোনোভাবেই সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিল না । হাজারো বার তাওবা করে; আবার সেই তাওবা ভাঙ্গে । এভাবেই চলছিলো তার জীবন । ভাবলো বিয়ে করলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে, বিয়ে করলও, কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন নেই । মনে হচ্ছে অদৃশ্য কোন রিমোট তাকে কন্ট্রোল করছে । সে শত চেষ্টা করেও নিজেকে সেখান থেকে বের করতে পারছে না ।

বিয়ের পরে এবার শুরু হলো নতুন সমস্যা । স্ত্রীর একের পর এক বিভিন্ন ধরণের অসুখ-বিসুখ দেখা দিচ্ছে । বিশেষ করে পেটে ব্যাথা হচ্ছে । নিজেদের মধ্যে প্রচুর মনোমালিন্য হচ্ছে । এক পর্যায়ে তা বিচ্ছেদের আকাঙ্খা পর্যন্ত গড়ালো ।

বিষয়টি এবার তাদের সন্দেহ হলো, দু’জনই ডায়াগনোসিস রুকইয়াহ’র জন্য আমার কাছে আসলেন । ১০ মিনিট কুরআন তিলাওয়াত করতে না করতেই দু’জনের মধ্যেই কাপাকাপিসহ বিভিন্ন ধরণের রিয়্যাকশন প্রকাশ পেতে লাগলো । স্ত্রীর তুলনায় স্বামীর মধ্যে অনেক বেশি । আমি তখন শুধু স্বামীকে ফোকাস করে তার কাছে গিয়ে মাথায় এবং শরীরে হাত দিয়ে (যেহেতু পুরুষ রোগী ছিলো) রুকইয়াহ শুরু করলাম, অল্প কিছুক্ষণের রোগীর শরীরে জ্বীন হাজির । প্রথমে হাত দিয়ে ইশারা করে বোবা হওয়ার নাটক করেছিল, ক্রমাগাত আযাবের আয়াত তিলাওয়াত করায় একটা পর্যায়ে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে ।

জ্বীনটি তথ্য দিলো যে, রোগীর মোবাইলে, পাজামায়, বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত পুকুরে থাকা একটি জুতায়, গ্রামের পরিত্যক্ত মাটির ঘরের পিড়া, ঘরের পাশের গাছে পুতে রাখা পেরেকে এবং ভাড়া বাসার মেঝে ছিটিয়ে যাদু কার্যকর করা হয়েছে । মোবাইল এবং পাজামার যাদু জ্বীন নিজেই করেছে । আর বাকিগুলো করেছে রোগীর সৎ মা । এবং তার সৎ মা-ই এক যাদুকর কবিরাজের মাধ্যমে এই জ্বীনকে পাঠিয়েছে— তাকে ধ্বংস করার জন্য । এবং তার স্ত্রীকেও চুলের মাধ্যমে যাদু করা হয়েছে । তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য ।

জ্বীনেরা প্রচুর মিথ্যাবাদী । আযাব সহ্য করতে না পেরে সত্য তথ্যও যেমন দেয়, সামিয়ক মুক্তি পেতে এবং বিভ্রান্ত করে চিকিৎসায় বিলম্ব ঘটাতে অনেক সময় সত্য মিথ্যা মিশ্রিত বা নিরেট মিথ্যা তথ্যও দেয় । যেকারণে তাকে হুমকি-ধমকি ও আযাব দিয়ে অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে সেখান থেকে সঠিক তথ্য বের করে নিয়ে আসতে হয় । এবং বাস্তবতার সাথে মিললেই কেবল সে তথ্য বিশ্বাস করতে হয় ।

এই কেসটিতে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তিনটি তথ্যের সত্যতা পেয়েছি ।

১। মোবাইলের যাদু > যাদু নষ্টের আয়াত পড়ে যখন মোবাইলে থুথু দিলাম জ্বীনের চিল্লাপাল্লা এবং কষ্ট তখন বেড়ে গিয়েছিল । যেমনটা যাদু নষ্টের সময় যাদুর খাদিম জ্বীনের হয়ে থাকে ।

ইলেকট্রিক ডিভাইসে আবার কীভাবে যাদু করা হতে পারে এটা বুঝার জন্য “ সিহরুল মারশুশ” বুঝতে হবে । আর মোবাইলের উপরে আবার জ্বীনদের কন্ট্রোল কীভাবে হতে পারে! এ বিষয়টি যাদের কাছে আশ্চর্য মনে হচ্ছে, তাদের জন্য আরো একটু অবাক করা তথ্য দিচ্ছি ।

আই ফোনের লক কিংবা সিকিউরিটি সম্পর্কে তো আশাকরি কাউকে আর ব্রিফ করে বুঝাতে হবে না। সেটার একটা ঘটনা শুনাচ্ছি— একজন জটিল রোগীকে রুকইয়াহ করছিলাম, জ্বীন রোগীর শরীরে হাজির ছিলো, রুকইয়াহ’র প্রভাব ও তিলাওয়াতের আযাব সহ্য করতে না পেরে সে আমার উপরে হামলা করার জন্য বারবার আমার দিকে তেড়ে আসতে উদ্যত হচ্ছিল, আর তার হাজবেন্ড তাকে ধরে রাখছিলো । হাজবেন্ড এর পকেটে ডাটা অফ ও লক করা অবস্থায় একটি আইফোন ছিলো, হঠাৎ করে হো হো করে হেসে উঠে জ্বীনটি বলল— তোর মোবাইলে এখন গান বেজে উঠবে, তখনই তার মোবাইলে হিন্দুদের গান বেজে উঠলো । অবাক করা বিষয় হলো— পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখা গেল, ডাটা অন করা এবং ইউটিউব থেকে গান প্লে হচ্ছে ।

২। পাজামার যাদু> পাজামার বিষয়টাও রোগী নিশ্চিত করেছেন যে, অনেকগুলো পাজামা থাকা সত্ত্বেও কেনই যেন তার বারবার ঐ পাজামাটাই ব্যবহার করতে মন চাইতো, এবং সেটাই সে বেশি বেশি পরিধান করতো । আর ওটা পরিধান করলেই তার মাস্টারবেশনের প্রবণতা আরো বেড়ে যেতো ।

৩। চুলের মাধ্যমে করা যাদু > রুকইয়াহ করার পরে স্বামীর কর্মস্থলে মহিলাদের চুলের গোছা পাওয়া গিয়েছে । অথচ সেখানে রোগীর ওয়াইফ বা অন্য কোন মহিলাই থাকে না । আল্লাহ ভালো জানেন— ধারণা করছি সেটা যাদুর চুল ছিলো । কারণ ওটা থেকে যাদু প্রভাব নষ্ট করার জন্য যখন আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়েছিল, তখনও হাজবেন্ড এর মধ্যে যাদু নষ্টের বেশ রিয়্যাকশন প্রকাশ পেয়েছিল ।

জ্বীনের দেয়া বাকি তথ্যের সত্যতা যাচাই করা এবং যাদুর বস্তু উদ্ধার করে তা নষ্ট করার জন্য খুব শিঘ্রই আমরা যাদুর ঘটনাস্থল তথা রোগীর গ্রামের বাড়িতে যাবো—ইনশাআল্লাহ্ ।

প্রসঙ্গ কথা— জ্বীন আছর করার পরে কেন ও কীভাবে তাকে খারাপ ভিডিও এবং অনৈতিকভাবে যৌন চাহিদা মিটানোর অভ্যাসে জড়িয়েছিল, এ বিষয়টা সম্পর্কে আরেকটু ক্লিয়ার ধারণা পেতে “সিহরুত তাহয়ীজ” সম্পর্কিত লেখাটি পড়তে পারেন ।

error: Content is protected !!