আপনি যদি এমন কোনো দোয়া, আয়াত, সূরা বা আমলের ব্যাপারে জানতে এ পোস্টটি পড়তে আগ্রহী হয়ে থাকেন— যা একবার এপ্লাই করলেই সারাজীবনের জন্য আপনার ঘর শয়তানের ডিস্টার্ব থেকে হেফাজত থাকবে, তাহলে শুধু এই পোস্টই নয় বরং পুরো কুরআন-হাদীসের বিশাল ভাণ্ডারও আপনাকে আশাহত করবে ।
কারণ কুরআন-হাদীসে এমন কোনো আমল বর্ণিত নেই; যা একবার করলেই সারাজীবনের জন্য শয়তান থেকে হেফাজত থাকা যায় । হাদীসে যতগুলো আমলের কথাই বর্ণিত হয়েছে— সবগুলোই নিয়মিত আমল । আমলগুলো নিয়মিত করলেই কেবল শয়তান থেকে হেফাজত থাকা যাবে ।
তো চলুন! ঘরকে শয়তান থেকে নিরাপদ রাখতে হাদীসে বর্ণিত কয়েকটি করণীয় ও বর্জনীয় আমল সম্পর্কে জেনে নেই ।
১) ঘরকে গায়রুল্লাহ’র সাহায্য প্রার্থনা থেকে মুক্ত করা : জ্বীন-শয়তান থেকে হেফাজতের উদ্দেশ্যে যদি আপনার বাসার চারকোনে লোহার পেরেক, মাটির সরা, গরুর দাত, গরুর সিং বা মাথা ইত্যাদি কোনো কিছু ঝুলানো থেকে থাকে, তাওবা করে সর্বপ্রথম সেগুলোকে খুলে ফেলতে হবে ।
২) ঘরকে শয়তানের বিচরণের অনুপযোগী এবং ফেরেশতাদের বিচরণের উপযোগী করা : আল্লাহ পাক বলেন, তাদের (মানুষদের) মধ্যে যাকে পারো তোমার (শয়তানের) ডাক দ্বারা বিভ্রান্ত কর । (সূরা বনী ইসরাঈল, ৬৪) [১] বিশিষ্ট মুফাস্সির তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ (রহ) বলেন, শয়তানের ডাক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে-গান । (তাফসীরে ইবনে কাছীর)
অতএব, ঘর থেকে শয়তান তাড়ানোর জন্য ঘরে গান-বাজনা বন্ধ করতে হবে । আপনার ঘরে যদি সারাদিন শয়তানের রিংটোন বাজে শয়তান তো কল রিসিভ করতে আসবেই!
সহীহ মুসলিম শরীফে (হাদীস নং, ৩৩২২) হযরত আবু হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে মূর্তি, ছবি বা কুকুর থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করেনা । [২] সুতরাং ঘর থেকে শয়তান তাড়াতে আপনার ঘরকে গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র, ছবি, মূর্তি ইত্যাদি থেকে মুক্ত করে ফেরেশতাদের প্রবেশের উপযুক্ত করতে হবে ।
উপরের স্টেপ দু’টি ফলো করার পরে নিন্মোক্ত আমলগুলো করলে আপনার ঘর শয়তানের ডিস্টার্ব থেকে নিরাপদ থাকবে-ইনশাআল্লাহ্ ।
১) ঘরে প্রবেশের সময় অবশ্যই ‘সালাম’ দেয়া : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তি আল্লাহর যিম্মাদারিতে, তাদের মধ্যে তৃতীয়তম হচ্ছে— যে ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে সালাম দেয় । (সুনানে আবূ দাঊদ, ২৪৯৪) [৩]
২) ঘরে প্রবেশের সময় ‘বিসমিল্লাহ বলা’ :
৩) খাবারের সময় ‘বিসমিল্লাহ বলা’ : হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলুল্লাহ (স) কে বলতে শুনেছেন, যখন কোনো লোক ঘরে প্রবেশ করে এবং ‘প্রবেশের সময় ও খানা খাওয়ার সময়’ আল্লাহকে স্মরণ করে (বিসমিল্লাহ বলে), শয়তান তখন তার সাঙ্গ-পাঙ্গদেরকে বলে, আজ এ ঘরে তোদের থাকারও জায়গা নেই; খাবারেরও ব্যবস্থা নেই । আর যখন কেহ ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করে, শয়তান তখন বলে, তোদের থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে, যদি খানা খাওয়ার সময়ও বিসমিল্লাহ না বলে, শয়তান তখন বলে— তোদের খাবারের ব্যবস্থাও হয়ে গেল । (সহীহ মুসলিম, ২০১৮) [৪]
৪) ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ‘দোয়া পড়া’ : হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় (بِاسْمِ الله، توكلتُ على اللهِ، لا حولَ ولا قوةَ إلا بالله) এই দোয়া পাঠ করে, তাকে বলা হয়— তুমি সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়েছ, তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে, তোমাকে সকল ধরণের অকল্যান থেকে রক্ষা করা হবে । এবং এক শয়তান আরেক শয়তানকে বলে, এমন লোককে তুমি কিভাবে ক্ষতি করবে? যাকে সঠিক পথ দেখানো হয়েছে, যাকে রক্ষা করা হয়েছে, যার জন্য যথেষ্ট হয়েছে । (সুনানে আবু দাঊদ, ৫০৯০) [৫]
৫) ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ভাল কাজের নিয়তে বের হওয়া : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখনই কোনো ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হয়, তার দরজায় দু’টি পতাকা থাকে । একটি পতাকা ফেরেশতার হাতে, আরেকটি পতাকা শয়তানের হাতে । যদি সে আল্লাহ পাকের পছন্দনীয় কোনো কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়, ফেরেশতা তার পতাকা নিয়ে তাকে অনুসরণ করে । এবং ঘরে না ফেরা পর্যন্ত সে ফেরেশতার পতাকাতলে (হেফাজতে) থাকে । আর যদি সে আল্লাহর অপছন্দনীয় কোনো কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়, শয়তান তার পতাকা নিয়ে তাকে অনুসরণ করে । এবং ঘরে না ফেরা পর্যন্ত সে শয়তানের পতাকাতলে থাকে । (মুসনাদে আহমদ, ৮২৮৬) [৬]
৬) রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই ‘বিসমিল্লাহ’ বলে দরজা বন্ধ করে দেয়া : সহীহ বুখারীতে হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রসূলুল্লাহ (স) থেকে বর্ণনা করেন, বিসমিল্লাহ বলে দরজা বন্ধ করে দাও, কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারেনা । (সহীহ বুখারী, ৩৭৩১) [৭]
৭) ঘরে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা : মক্কার মানব কাফেরদের অবস্থা উল্লেখ করে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন, (হে নবী) আর যখন আপনি কুরআন পাঠ করেন, তখন আমি আপনার ও পরকালে অবিশ্বাসিদের মাঝে এক অদৃশ্য পর্দা ফেলে দেই । (৪৫) আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দেই, যাতে তারা একে উপলব্ধি করতে না পারে এবং কর্ণকুহরে বোঝা চাপিয়ে দেই । কুরআনে আপনি যখন আপনার পালনকর্তার একত্বের কথা উল্লেখ করেন— তখন তারা অনীহাবশত পিঠ দেখিয়ে চলে যায় । (৪৬) (সূরা বনী ইসরাঈল) [৮]
মানব কাফেরদের মত ‘দানব’ কাফেরদের (জ্বীন-শয়তানের) অবস্থাও একই রকম । কুরআন তিলাওয়াত করলে শয়তান তথা অবাধ্য জ্বীনগুলোও পিঠ দেখিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ।
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলতেন, যে ঘরে কুরআন পাঠ করা হয়, তার বাসিন্দাদের রিজিকের মধ্যে বরকত আসে, সে ঘরে ফেরেশতা উপস্থিত হয় । এবং শয়তান সে ঘর ছেড়ে চলে যায় । আর যে ঘরে কুরআন পাঠ করা হয়না, তার বাসিন্দাদের রিজিক সংকীর্ণ হয়ে যায় । ফেরেশতারা সে ঘর ছেড়ে চলে যায় এবং সে ঘরে শয়তান উপস্থিত হয় । (মুসনাদে দারেমী, ৩৩৫২) [৯]
তিরমীযী শরীফে বর্ণিত (হাদীস নং, ২৭৬৩) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ কথাটি সর্বদা গুরুত্বের সাথে মনে রাখবেন- ‘কোনো বান্দা আল্লাহ তায়ালার স্মরণ ব্যতিত নিজেকে শয়তান থেকে হেফাজত করতে পারবেনা ।’ [১০]
আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলব, তাবিজ, সিং, লোহা, সরা ইত্যাদি যাই বলুন না কেন? কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া জ্বীন-শয়তান তাড়ানোর কার্যকর ও স্থায়ী কোনো উপায় নেই, নেই এবং নেই । বরং এসবে আরো শয়তানের বিচরণে সহজ হয়ে যায় । সুতরাং নিজেকে এবং নিজ ঘরকে শয়তান থেকে হেফাজত রাখার জন্য নিয়মিত বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে । বিশেষত নিম্নোক্ত সূরা ও আয়াতগুলো খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়মিত পাঠ করা উচিত ।
(১) সূরা বাক্বারা
হাদীস নং ১) হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন— তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিওনা, নিশ্চয়ই যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়— সেখান থেকে শয়তান পালায়ন করে । (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮০) [১১]
হাদীস নং ২) হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন— তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিওনা, নিশ্চয়ই যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় সে ঘরে শয়তান প্রবেশ করেনা । (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২৮৭৭)[১২]
হাদীস নং ৩) দারেমী শরীফে দূর্বল সুত্রে হযরত আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, যে ঘরে সূরা বাক্বারা পাঠ করা হয় শয়তান সেখান থেকে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালায়ন করে । (মুসনাদে দারেমী, ৩৪১৮) [১৩]
হাদীস নং ৪) হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকেও দূর্বল সুত্রে আরেকটি হাদীস বর্ণিত আছে । তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন— প্রত্যেক জিনিসেরই একটি কুঁজ আছে, আর কুরআনের কুঁজ হলো সূরা বাক্বারা । যে ব্যক্তি কোনো রাতে তার ঘরে এ সূরাটি তিলাওয়াত করে, তিন রাত পর্যন্ত তার ঘরে শয়তান প্রবেশ করতে পারেনা । আর যে ব্যক্তি দিনেরবেলা তার ঘরে এ সূরাটি তিলাওয়াত করে, তিন দিন পর্যন্ত তার ঘরে শয়তান প্রবেশ করতে পারেনা । (সহীহ ইবনে হিব্বান, ৭৮০) [১৪]
(২) সূরা বাক্বারার দশ আয়াত
হাদীস নং ১) হযরত শা’বী (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রাতে সূরা বাক্বারার দশ আয়াত পাঠ করবে, সে ঘরে সকাল পর্যন্ত শয়তান প্রবেশ করতে পারবেনা । (আয়াত দশটি হলো—) সূরা বাক্বারার শুরুর চার আয়াত, আয়াতুল কুরসী ও তার পরের দুই আয়াত এবং সূরা বাক্বারার শেষ তিন আয়াত । (সুনানে দারেমী, ৩৪২৫) [১৫]
হাদীস নং ২) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা বাক্বারার প্রথম চার আয়াত, আয়াতুল কুরসী ও তার পরবর্তী দুই আয়াত এবং সূরা বাক্বারার শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে— শয়তান বা অপছন্দনীয় কিছু সেদিন তার ও তার পরিবারের কাছেও আসতে পারবেনা । (সুনানে দারেমী, ৩৪২৬) [১৬]
(৩) সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত
হাদীস নং ১) হযরত নু’মান ইবনে বাশীর (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেছেন— নিশচয়ই আল্লাহ আসমান-যমীন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন, সেখান থেকে দুটি আয়াত নাযিল করে; আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে সূরা বাকারা সমাপ্ত করেছেন । কোন বাড়িতে তিন দিন আয়াত দুটি পাঠ করা হলে শয়তান তার কাছেও আসতে পারেনা । (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ২৮৮২)[১৭]
হাদীস নং ২) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন— যে ব্যক্তি কোনো রাতে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে, তার (হেফাজতের) জন্য উক্ত আয়াত দুটিই যথেষ্ট । (সহীহ বুখারী, ৫০০৯) [১৮]
(৪) আয়াতুল কুরসী
হাদীস নং ১) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, কোনো একজন সাহাবীর সাথে এক জ্বিনের সাক্ষাত হলে; তারা দু’জন মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হলো । মানুষটি (সাহাবী) জ্বীনটিকে হারিয়ে দিয়ে বলল, আমি তো দেখছি তুমি বেশ শুকনা এবং দূর্বল । তোমার বাহুদুটিও কুকুরের বাহুর মতো । তোমরা পুরো জ্বিন সম্প্রদায়ই কি এমন? নাকি তাদের মধ্যে থেকে তুমিই কেবল এমন? জ্বীনটি বলল, আল্লাহর কসম— আমি তাদের (জ্বীন সম্প্রদায়ের) শক্তিশালীদের মধ্য থেকে একজন । তবে তোমার সঙ্গে আবার কখনো সাক্ষাত হলে তুমি যদি আমাকে হারিয়ে দিতে পারো— আমি তোমাকে এমন একটি জিনিস শিক্ষা দিবো, যা তোমার উপকারে আসবে । অতঃপর তাদের আবারও সাক্ষাত হলো এবং এবারও উক্ত সাহাবী জ্বীনটিকে হারিয়ে দিলো । সাহাবী জ্বীনটিকে বলল, (ওয়াদামতে) এবার তুমি আমাকে সে জিনিসিটি শিখিয়ে দাও । জ্বীনটি বলল, হাঁ দিবো । সাহাবীকে লক্ষ্য করে জ্বিনটি জিজ্ঞেস করল, তুমি কি আয়াতুল কুরসী পড়? সাহাবী বলল, জি পড়ি । জ্বীনটি বলল, তুমি যে ঘরে (কোনো রাতে) আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, গাধার বায়ু ত্যাগের ন্যায় আওয়াজ করতে করতে শয়তান সেখান থেকে পালায়ন করবে । অতঃপর সকাল পর্যন্ত আর সেখানে প্রবেশ করতে পারবেনা । (সুনানে দারেমী, ৩৪২৪) [১৯]
হাদীস নং ২) সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত খাদ্য গুদামের পাহাড়ার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকাকালীন হযরত আবু হুরায়রা (রা) এবং পরপর তিনদিন রাতে গুদামে খাদ্য চুরি করতে আসা শয়তানের ঘটনার শেষাংশে, তৃতীয় রাতে আবু হুরায়রা (রা) এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে শয়তান তাকে বলেছিল—“রাতে তুমি যখন ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় যাবে তখন ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করলে— সকাল পর্যন্ত তোমার সাথে একজন হেফাজতকারী ফেরেশতা থাকবেন এবং শয়তান তোমার নিকটবর্তীও হতে পারবেনা ।” এতদশ্রবনে নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদিও সে (চোরটি) মিথ্যাবাদী তবে (এ কথাটি) সে সত্য বলেছে, আর সে ছিল শয়তান । (সহীহ বুখারী, ৫০১০) [২০]
হাদীস নং ৩) একই ঘটনায় তিরমিজী শরীফের বর্ণনার শেষাংশে উল্লেখ রয়েছে, শয়তান আবু হুরায়রা (রা) কে উদ্দেশ্য করে বলল, “আমি তোমাকে একটি জিনিস শিখিয়ে দিচ্ছি— তুমি তোমার ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করিও তাহলে শয়তান বা অন্যকিছু তোমার নিকটবর্তী হতে পারবেনা ।” (সুনানে তিরমিযী, ২৮৮০) [২১]
(৫) আজান দেয়া
হাদীস নং ১) হযরত সুহাইল থেকে বণির্ত । তিনি বলে, আমার পিতা আমাকে বনু হারিস গোত্রের কাছে পাঠালেন । আমার সাথে একটি বালক বা একজন বয়স্ক লোক ছিল । একটি বাগানের পাশ দিয়ে অত্রিক্রম করার সময়— বাগানের ভিতর থেকে কে যেন তার (সঙ্গীর) নাম ধরে ডাকল । কিন্তু বাগানের দিকে তাকিয়ে সে কাউকেই দেখতে পেল না । আমার পিতার কাছে এ ঘটনা বর্ণনা করার পরে তিনি বললেন, এরুপ ঘটনার সম্মুখীন হবে বুঝলে আমি তোমাকে কখনোই পাঠাতাম না। তবে (ভবিষ্যতে) কখনো এরুপ ডাক শুনতে পেলে তুমি আজান দিবে । কেননা আমি আবু হুরায়রাহ (রা) কে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন নামাজের আযান দেয়া হয় শয়তান বায়ু ত্যাগ করতে করতে সেখান থেকে পালায়ন করে । (সহীহ মুসলিম, ৩৮৯ ) [২২]
বর্ণিত আ’মালের সারসংক্ষেপ-
বর্জনীয় :
১) ঘরকে শয়তানের আওয়াজ তথা গান-বাজনা মুক্ত করা
২) ফেরেশতা প্রবেশের প্রতিবন্ধক তথা ছবি, মূর্তি ইত্যাদি থেকে ঘরকে মুক্ত করা।
করণনীয় :
১) ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে এবং বিসমিল্লাহ বলে প্রবেশ করা
২) ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নেক কাজের নিয়তে; দোয়া পড়ে বের হওয়া
৩) ঘরে বসে খাবার খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে খাবার খাওয়া
৫) হঠাৎ কখনো শয়তানের ডিস্টার্ব খুব বেশি বেড়ে গেলে অন্যান্য আমলের পাশাপাশি আজান দেয়া
৪) ঘরে বেশি বেশি কুরআনের তিলাওয়াতের ব্যবস্থা করা।
ঘরে প্রতিদিন নূন্যতম একবার–
৫) সূরা বাক্বারার দশ আয়াত
৬) সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত
৭) এবং আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত করা ।
৮) সম্ভব হলে প্রতিদিন একবার অথবা প্রতি তিনদিনে একবার সূরা বাক্বারা তিলাওয়াত করা ।
নতুন ঘর নির্মাণ করার পরে বা ঘরে জ্বীন-যাদু বিষয়ক কোন সমস্যা দেখা দিলে নিম্নোক্ত আমল করলে সমস্যা কমে যাবে—ইনশাআল্লাহ্ ।
যে ঘরে বা যে রুমে সমস্যা দেখা যাচ্ছে, সেখানে বসে উচ্চ আওয়াজে (সম্ভব হলে সাউন্ড বক্সে) প্রতিদিন একবার করে ধারাবাহিকভাবে তিনদিন সূরা বাক্বারা তিলাওয়াতের ব্যবস্থা করতে হবে । তিলাওয়াতের পূর্বে বড় সাইজের একটি বালতিতে পবিত্র পানি ভরে কাছে রাখবে । (সম্ভব হলে উক্ত পানিতে জমজম ও বৃষ্টির পানি বা যেকোন একটি মিশিয়ে নিতে পারলে আরো বেশি ভালো ।) অতঃপর প্রতিদিন তিলাওয়াত শেষে উক্ত পানিতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তিনবার ফুঁ দিয়ে পুনরায় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ঢেকে রাখবে । এভাবে তিনদিন তিলাওয়াত শেষে ৯বার ফুঁ দেয়ার মাধ্যমে পানি রেডি হয়ে গেলে— ঘরের মধ্যে (যথাসম্ভব) সব জায়গায় উক্ত পানি ছিটিয়ে দিবে । ঘরের প্রত্যেক কোনায় কোনায়, ফার্ণিচার ও খাটের নিচে এক কথায় ঘরের সর্বাস্থানে পানি স্প্রে করে দিবে । অতঃপর বদনা ইত্যাদি চিকন নলযুক্ত কোন পাত্র দ্বারা ঘরের বাহিরে নিরবিচ্ছিন্ন একটি রেখার ন্যায় পানি ঢেলে যাবে । অর্থাৎ পানি দ্বারা ঘরের চারপাশে একটি বাউন্ডারি তৈরি করবে ।
বাহিরে পানি দেয়ার কাজটি যদিও দিনরাতের যেকোন সময় করলেই হবে, তবে যেকোন ওয়াক্তের আজানের সময় শুরু করে আজান চলাকালীন সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারলেই সবচেয়ে ভালো হয় । সেক্ষেত্রে একাধিক বালতিতে বাক্বারা তিলাওয়াতকৃত পানি নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তি আজানের পূর্বেই নিজ নিজ পজিশনে দাড়িয়ে যাবে, এবং আজান শুরু হওয়া মাত্রই পূর্ব থেকে বণ্টনকৃত এরিয়ায় আজানের মধ্যেই দ্রুত পানি ছিটিয়ে শেষ করবে । বাড়ির এরিয়া কভারেজের জন্য জোড় কিংবা বিজোড় যত সংখ্যক লোকবল লাগবে নেয়া যাবে, কোন অসুবিধা নেই । পর্দার লঙ্ঘণ না হলেও মহিলারাও এ কাজে অংশ গ্রহণ করতে পারবে ।
অপারগতা বা বিশেষ কোন ওজরের কারণে যদি পূর্ণ সূরা বাক্বারা তিলাওয়াত করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে— পরপর তিনদিন একবার করে মোবাইলে সুউচ্চ আওয়াজে সূরা বাক্বারার তিলাওয়াত প্লে করবে এবং পূর্ণ সূরার পরিবর্তে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পড়ে উপরের নিয়মে পানিতে ফুঁ দিয়ে তা ঘরে ও ঘরের বাহিরের স্প্রে করবে ।
এভাবে আমল করলে পারিবারিক যাদু, ঘরের সদস্যদের উপর সামগ্রিক বদনজর বা ঘরে জ্বীন-শয়তানের আনাগোনা ইত্যাদি থেকে আল্লাহ পাক হেফাজত করবেন—ইনশাআল্লাহ্ ।
বিঃদ্রঃ সূরা বাক্বারার ফুঁ দেয়া পানি আল্লাহ’র ইচ্ছায় যাদু নষ্টের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী । যেহেতু সবসময় পূর্ণ সূরা পড়ে পানি প্রস্তুত করা সম্ভব নাও হতে পারে, সে কারণে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য ঘরে কিছু পানি রেখে দেয়া যেতে পারে । এবং সম্ভব হলে উক্ত পানি দিয়ে ঘরের প্রত্যেক সদস্য তিনদিন বা কমপক্ষে একদিন গোসল করতে পারলে অনেক উপকৃত হবেন— ইনশাআল্লাহ্ ।